দেশের অগ্রযাত্রায় বিরোধী দলের ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, একটি দেশের অগ্রযাত্রার মূল শক্তি হিসেবে প্রয়োজন সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়। অতীতের বিরোধী দলগুলো সরকারকে কখনোই সহযোগিতা ও সমন্বয় করেনি। যে কারণে দেশ আশানুরূপ এগিয়ে যায়নি। ২০১৪ সাল থেকে আমাদের দল জাতীয় পার্টি এবং আমি, বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকে সরকারের যেমন সমালোচনা করেছি, ভুল-ত্রুটি তুলে ধরেছি, জনগণকে সচেতন করেছি, পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয় করে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করেছি বলেই দেশে নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও সংসদের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
রওশন এরশাদ বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল সংসদে যেমন সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে, ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে, তেমনি সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করে। সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, সরকার ও বিরোধীদলীয় পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের সব অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই ইতিহাস একদিন তার সাক্ষ্য দেবে। বিরোধী দলের নেতা বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন কোথায়? এখনও দেশে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, নারী শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে, তাহলে কোথায় নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় সংসদে থাকা প্রধানমন্ত্রী নিজেকে, স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতাকে দেখাতে থাকেন, তখন সংসদে হাসির রোল ওঠে। এ সময় রওশন এরশাদ বলেন, এটা তো ভাগ্যক্রমে হয়ে গেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী আপনি নির্ধারিত, সবাই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না, কিন্তু আমি তো ভাগ্যক্রমে হয়ে গেছি। আমার বদলে অন্য কেউও হতে পারত। এটা দেখিয়ে তো নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে বলা যাবে না, কেননা, আমরা সংসদে মাত্র ক’জন নারী, প্রায় সবাই তো পুরুষ। তাছাড়া প্রতিনিয়ত গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র নারীরা নির্যাতিত, ধর্ষিত, অত্যাচারিত হচ্ছে, তাহলে এটাকে কি নারীর ক্ষমতায়ন বলা চলে?
রওশন এরশাদ বলেন, দেশে কি দুর্ভীক্ষ চলছে যে, আমাদের কচুরিপানা খেতে হবে? আমাদের পরিকল্পণামন্ত্রী মান্নান সাহেব মানুষকে কচুরিপানা খেতে উপদেশ দিয়েছেন। আমি এখানে কিছু কচুরিপানা নিয়ে এসেছিলাম, ওনাকে দিতাম। গরু তো ঘাস খায়, ঘাসেও ভিটামিন রয়েছে, তাহলে আমরা কেন ঘাস খাচ্ছি না? রওশন এরশাদ বলেন, দেশে ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে, হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী তো এটা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ব্যাংকে কোনো টাকা নেই, ব্যাংকগুলোতে লিকুইড মানি নেই। তিনি দেশে ব্লাক মানি সাদা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদে অনুপস্থিত থাকায় তাকে একহাত নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী তো প্রায়ই বিদেশে থাকেন, তাকে সংসদেও আমি দেখি না। তাহলে কীভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে? বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোতেই ডাক্তার পাওয়া যায় না, তো কমিউনিটি ক্লিনিকে কোথা থেকে ডাক্তার থাকবে? কোথায়ও ডাক্তার থাকে না, থাকে একজন ঝাড়–দার ও একজন গার্ড। ফলমূল শাকসবজিতে ফরমালিনমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, বাজারে সব ফলমূল শাকসবজি বিষাক্ত, ফরমালিনযুক্ত। তিনি বলেন, রাজধানীতে সর্বত্র মশা, কথা বলতে গেলে মুখের মধ্যে মশা ঢোকে, সিটি করপোরেশন তো কোনো কাজ করে না। মশা মারার জন্য কর্মী থাকলেও কেউ কাজ করে না। তাহলে মশা মরবে কীভাবে? তাছাড়া গার্ভেজগুলোতে যা ময়লা, দুর্গন্ধ তাতে পরিবেশগুলো কীভাবে ভালো থাকবে? যদি এমন মশা থাকে তাহলে আবার ডেঙ্গু তো আসবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এভাবে চললে আমরা কেন ট্যাক্স দেব।