আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

বেশি ঝুঁকিতে বয়স্করা

আলোকিত ডেস্ক
| শেষ পাতা

করোনা ভাইরাস

চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ রোগীর উপর বিশদ গবেষণা চালিয়ে বলেছেন, বয়স্ক এবং আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভোগা অসুস্থ ব্যক্তিরাই ভাইরাসজনিত রোগটিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। করোনা ভাইরাসজনিত রোগটিকে কোভিড-১৯ নামে ডাকা হচ্ছে। প্রায় ৭০ হাজার কোভিড-১৯ রোগীর উপর এ গবেষণা চালানো হয়। তার মধ্যে নিশ্চিত ভাইরাস আক্রান্ত, সন্দেহজনক এবং লক্ষণ ধরা পড়েনি এমন মানুষও রয়েছেন। ৪৪ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগীর শারীরিক অবস্থা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। বলা হচ্ছে, চীনে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এটাই এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বড় গবেষণা। 
চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেন্টেশন (সিসিডিসি) এর তথ্যে বলা হচ্ছে, ৮০ ভাগ রোগীর অবস্থা গুরুতর নয়। বয়স্ক ও অন্যান্য  রোগে অসুস্থ থাকা ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন। মঙ্গলবার উহানের এক হাসপাতালের পরিচালক মারা গেলে চিকিৎসা কর্মীরা যে কতটা ঝুঁকিতে রয়েছেন সেটা আবারও আলোচনায় আসে। ৫১ বছর বয়সি লিউ ঝিমিং ছিলেন উহানের সবচেয়ে ভালো হাসপাতালগুলোর একটির পরিচালক। এ পর্যন্ত যে ক’জন চিকিৎসা কর্মী মারা গেছেন, লিউ ঝিমিং তাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা। হুবেই প্রদেশের উহান শহরটি দেশটির মধ্যে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হওয়া একটা শহর। সিসিডিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  এ প্রদেশে মৃত্যুহার ২ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে চীনজুড়ে এ হার শূন্য দশমিক চার শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  সব মিলিয়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃত্যুহার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। চীনে করোনা ভাইরাসজনিত রোগে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ১৮০০ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ হাজারের বেশি। চীনের কর্তৃপক্ষ বলছে ১২ হাজারের বেশি মানুষ সেরে উঠেছে। চাইনিজ জার্নাল এপিডেমিওলোজিতে সোমবার সিসিডিসি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সিসিডিসির গবেষণার আওতায় ১১ ফেব্রুয়রি পর্যন্ত চীনের ৪৪ হাজার ৬৭২ জন কোভিড-১৯ রোগীর উপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ সংক্রমণ নমনীয় মাত্রার, ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ তীব্র, ৪ দশমিক সাত শতাংশ সংকটপূর্ণ। সবচেয়েস ঝুঁকিতে ৮০ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সি ব্যক্তিরা রয়েছেন। এদের সংখ্যা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।  ৯ বছর বয়স থেকে ৩৯ বছর পর্যন্ত কোনো ঝুঁকি প্রায় নেই। মৃত্যুর হারও অনেক কম, শূন্য দশমিক দুই শতাংশ। এরপরের এজ গ্রুপ বা বয়সভিত্তিকভাবে শঙ্কা বাড়ছে। যেমন ৪০ বছরে শূন্য দশমিক চার শতাংশ, ৫০ বছরে এক দশমিক তিন শতাংশ, ৬০ বছরে তিন দশমিক ছয় শতাংশ এবং ৭০ বছরে ঝুঁকির মাত্রা আট শতাংশ।
নারী পুরুষ হিসেব করলে পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে। নারী- এক দশমিক সাত শতাংশ, পুরুষ- দুই দশমিক আট শতাংশ। যাদের আগে থেকেই হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের অসুখ এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা এ ভাইরাসে সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। 
মেডিকেল স্টাফ : মেডিকেল স্টাফ যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে ৩ হাজার ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১ হাজার ৭১৬ জন নিশ্চিত এ রোগে আক্রান্ত।  ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচজন মারা  গেছে।
ভবিষ্যতের বার্তা : গবেষকরা বলেছেন, করোনা ভাইরাসটি ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রতিবেদনে ধারণা করা হচ্ছে, এখন সংক্রমণ পড়তির দিকে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার কারণ হতে পারে ‘ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শহরকে আলাদা করে ফেলা, জরুরি তথ্য উচ্চ মাত্রায় বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা- যেমন হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, সাহায্য নেওয়া ইত্যাদি, বিভিন্ন ক্ষেত্রের রেসপন্স টিমের কার্যক্রম এ মহামারী প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু গবেষকরা সতর্ক করে বলেছে, অনেকেই চন্দ্রবর্ষের ছুটি শেষ করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরছে। চীনের উচিত, মহামারী ঠেকাতে সম্ভাব্য সব সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া। বিবিসি, দ্য স্টার