- বেড়েছে হিজড়ার উৎপাত
- পদক্ষেপ না নেওয়ায় যাত্রীদের ক্ষোভ
- লোকাল জালালাবাদ এক্সপ্রেসও বন্ধ
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, টিকিট সংকট এবং ট্রেনে হিজড়াদের উৎপাত নিয়ে ক্ষুব্ধ সিলেট অঞ্চলের ট্রেনযাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। রেল সূত্র জানায়, সিলেট-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত ও কালনী এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে উদয়ন ও পাহাড়িকা চলাচল করে। এছাড়া লোকাল ট্রেন হিসেবে সুরমা মেইল সিলেট-ঢাকা ও কুশিয়ারা সিলেট-আখাউড়া রুটে চলাচল করে। সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী লোকাল জালালাবাদ ট্রেন সম্প্রতি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন টিকিট কাউন্টারে গেলে প্রায়ই টিকিট সংকট, কিংবা সিট খালি নেই বলে সংশ্লিষ্টরা যাত্রীদের বিদায় করে দেন। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সিটসহ টিকিট মিলে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে আন্তঃনগর ট্রেন স্টেশনে পৌঁছার আগেই ট্রেনের ভেতরে স্পিকারে ঘোষণা হতো ট্রেন কোন স্টেশনে প্রবেশ করছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রাতে ট্রেনে ভ্রমণকারীরা প্রতিনিয়ত পড়ছেন বিপাকে। কোনো সহযোগিতা তো দূরের কথা অ্যাটেন্ড্যান্টদের অনেক ক্ষেত্রে খোঁজও মেলে না। উৎকোচ নিয়ে টিকিটবিহীন যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ ও আরএনবি সদস্যদের বিরুদ্ধে। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ রুটের নিয়মিত যাত্রী হোসাইন আহমদ সুজাদ জানান, ট্রেনে যাতায়াতের ইচ্ছা সত্ত্বেও টিকিট সংকটের কারণে যাতায়াত করা যায় না। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ কামনা করেন। ট্রেনযাত্রী ইফতেখার হোসেন সুজন জানান, রেলওয়ের ভ্রমণকালে তিনি প্রায়ই শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন। ট্রেনে যাত্রাপথে হিজড়াদের উৎপাত নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। নানাভাবে হিজড়ারা যাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। এনিয়ে সব সময়ই নির্বিকার দেখা গেছে পুলিশ ও অ্যাটেন্ড্যান্টদের। তারা একাধিকবার ট্রেনে প্রবেশ করে যাত্রীদের কাছে টাকা দাবি করে। তাসলিমা তাসনিম কুসুম নামের এক ট্রেনযাত্রী জানান, আগের তুলনায় ট্রেনে হিজড়াদের উৎপাত অনেক গুণ বেড়ে গেছে। ট্রেনে চড়ে হিজড়ারা যাত্রীদের কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে। তাদের দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে তারা যাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমদ তার সাম্প্রতিক ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসে তিনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল আসছিলেন। রাত তখন সাড়ে ৩টা। উপবন ট্রেনটি যথারীতি বরমচাল এসে থামে। স্টেশনের বাইরে অনেক পেছনে ট্রেনের বগি থাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের অন্ধকার রাতে তিনি বুঝতে পারেননি ট্রেনটি কোথায় দাঁড়িয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে অনুমান করেন তিনি বরমচাল এসে পৌঁছেছেন। তিনি ট্রেন থেকে নামার প্রস্তুতি নেন। তাড়াহুড়ো করে নামার সময় ট্রেনটি দ্রুতবেগে চলার কারণে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। এতে ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমদের বাম হাতের হাড় তিনটি স্থানে ভেঙে যায় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তিনি সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে অন্যত্র চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ট্রেনের অ্যাটেন্ড্যান্টদের দায়িত্বহীনতায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে তার অভিযোগ।
রেল সূত্র জানায়, আন্তঃনগর ট্রেনের প্রতিটি বগিতে একজন করে অ্যাটেন্ড্যান্ট দায়িত্বে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, ট্রেন ছাড়ার পর তাদের দেখা মেলে না। তারা ব্যস্ত থাকেন টিকিটবিহীন যাত্রী ও হকারদের নিয়ে। রাতে চলাচলের সময় আন্তঃনগর ট্রেনের দরজা লক (বন্ধ) করার কথা থাকলেও তা এখন করা হয় না। আগে স্টেশনে ট্রেন পৌঁছার আগেই দরজার লক খুলে দিয়ে যাত্রীদের সতর্ক করা হতো। এখন তাও হয় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা-সিলেট লোকাল মেইল ট্রেন ও চট্টগ্রাম-সিলেট মেইল ট্রেনে রাতে বাতি জ্বলে না, ফ্যান চলে না। কখন আসে কখন যায়Ñ এর কোনো সঠিক সময় নেই। সিলেট-আখাউড়া লোকাল ট্রেন চললেও আসা-যাওয়ার কোনো নির্ধারিত সময় মানা হয় না।
জালালাবাদ এক্সপ্রেস বন্ধ : রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচলকারী (আপ-ডাউন) জালালাবাদ মেইল ট্রেন ইঞ্জিন সংকটের কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৩ আপ ও ১৪ নম্বর ডাউন জালালাবাদ এক্সপ্রেস নামে ট্রেন দুটির চলাচল ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জালালাবাদ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও ক্রুদের (চালকসহ অন্যদের) কনটেইনারবাহী ট্রেনে বদলি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা হয়েছে। কনটেইনার পরিবহনে গতি আনার জন্য জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন কনটেইনারবাহী ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। রেল সূত্র জানায়, মালবাহী ট্রেনের জন্য এখন বাড়তি লোকোমোটিভের প্রয়োজন হচ্ছে। এ কারণে জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জালালাবাদ এক্সপ্রেস বন্ধ হওয়ায় সাধারণ গরিব যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মো. নাজমুল ইসলাম মাঝেমধ্যে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়টি স্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে এমনটি হচ্ছে। এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। রেলকে যুগোপযোগী এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিচালনা করার জন্য রেলওয়ে বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। মো. নাজমুল ইসলাম জানান, ২৩৯ রেলওয়ে স্টেশন পরিচালনা করছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে আগে রেকর্ড করে মাইক চালুর ব্যবস্থা করা হবে। টিকিট নিয়ে অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান জানান, এখন সব কিছু অনলাইনে হয়। মোবাইলে টিকিট ক্রয়সহ সব তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে। টিকিট নেই, সিট নেইÑ এসব বলার কোনো সুযোগ নেই, যা হবে সব অনলাইনে দেখা যাবে। তবে যারাই অনিয়ম করবে, তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার বলেও মন্তব্য এ কর্মকর্তার।