চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে ইরি-বোরো ধানের চারা বিক্রির হাট ষ আলোকিত বাংলাদেশ
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে ইরি-বোরো ধানের চারা (স্থানীয় ভাষায় জালা বা হালি) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বিগত বছর সরকার চারায় প্রণোদনা দিলেও এ বছর দিচ্ছে না। ফলে কৃষক চারার উৎপাদন মূল্যও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বীজ ধানের প্যাকেট ক্রয়ের সঙ্গে চারা বিক্রির কোনো মিল না থাকায় উৎপাদনে আগ্রহ হারাতে বসেছেন তারা। এ জাতীয় বিষয়ে সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি বিভাগ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইরি-বোরো মৌসুমে লাভের আশায় একশ্রেণির কৃষক বাজার থেকে বীজ ধান কিনে তা থেকে চারা উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করেন। অনেকটা মৌসুমি ব্যবসায়ীর মতো তারা ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের চারা বেচে বাড়তি আয় করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ জাতীয় কৃষকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আবার অনেক কৃষক বীজ থেকে চারা উৎপাদন শেষে নিজের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিগুলো বাজারে অন্য কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। এ জাতীয় কৃষক সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনা না পাওয়ায় চারা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সোমবার হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজারে ধানের চারা বিক্রি করতে আসা কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা এ বিষয়টি জানান। বাকিলা ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের কৃষক কুতুবউদ্দিন জানান, তিনি বিআর ২৯ ধানের ২ কেজি বীজ ধানের প্যাকেট কিনেছেন ৪৫০ টাকায়। এ ধান বীজতলায় রোপণ শেষে প্রায় দেড় মাস পরিচর্যা করেছেন। এ চারা বীজতলা থেকে উঠাতে খরচ পড়েছে ৯০০ টাকা। বাজারে আনার রিকশা ভাড়া আর বাজারের খাজনা মিলিয়ে খরচ পড়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। নিজের শ্রম-ঘামের হিসাব আনলে মোট খরচ দাঁড়ায় কমপক্ষে ২ হাজার টাকা। সেই বীজ ধানের চারা (হালি বা জালা) বাজারে ক্রেতারা দাম বলছেন ৬০০ টাকা। একই ইউনিয়নের গোগরা গ্রামের আক্তার হোসেন বিক্রির জন্য ১০টি চটের বস্তায় বাজারে চারা এনেছেন। এ ১০ বস্তা ধানের চারা উৎপাদন করতে তার নিজের শ্রম-ঘাম বাদ দিয়ে খরচ পড়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আক্তার হোসেন হাজারপাঁচেক টাকায় চারা বিক্রির আশা করছিলেন। কিন্তু ক্রেতারা ১০ বস্তা ধানের চারার মূল্য বলছেন ১ হাজার ৭৫০ টাকা। পাশের কামরাঙ্গা গ্রামের বিল্লাল হোসেন ২ কেজি বীজ ধানের প্যাকেট কিনেছেন ২০০ টাকায়। খেতে বীজ বপন করে দেড় মাস পরিচর্যা শেষে চারা উঠানোর খরচ পড়েছে ৮০০ টাকা। বাজারে সেই বীজ ধানের স্তূপের দাম উঠেছে মাত্র ৬০০ টাকা। একইভাবে মনের খেদোক্তি প্রকাশ করেন উচ্চঙ্গা গ্রামের আ. মান্নান। তিনি বলেন, না বেচতে পারলে ধানের চারা খালে ফেলে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। তবে ভবিষ্যতে বীজ ধান চাষ দিয়ে চারা উৎপাদন করে আর ব্যবসা করব না। হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়নমণি সূত্রধর বলেন, রবি মৌসুমে আমরা ভুট্টা আর সরিষায় প্রণোদনা পেয়েছি। মাঠপর্যায়ের কৃষককে তা দেওয়া হয়েছে। তবে ধানের চারা উৎপাদনকারী কৃষকের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত কোনো প্রণোদনা বা সহায়তা নেই।