আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২১-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

অপরাধের রাজা এসআই জলিল

হেরোইন, মদ-গাঁজা ইয়াবা-অস্ত্রের অবৈধ ব্যবসা পুলিশ কর্মকর্তার

| প্রথম পাতা

হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা, বিয়ার থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্রসহ সব অসাধু ব্যবসার গুরু তিনি। এমন কোনো অপরাধ নেই তার দখলে ছিল না। এসআই আবদুল জলিল মাতুব্বর ডিবি পুলিশের পোশাকের আড়ালে ছিল পেশাদার অপরাধী। নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে গোপালগঞ্জে পোস্টিংয়ের পর অবৈধ মালামাল স্থানান্তরের সময় কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে মালামাল লোড-আনলোডের সময় ঝাঁকিতে মাদকের গন্ধের সূত্র ধরে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। মাদক খুঁজতে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, ৫২৮৯ পিস ইয়াবা, ৩২৪ পুরিয়া হেরোইন, ৬৯ রাউন্ড গুলিসহ ৬৩ ধরনের আলামতসহ অবৈধ জিনিসপত্রের সন্ধান পায় থানা পুলিশ। ততক্ষণে জানাজানি হয় পুলিশের অবৈধ জিনিসপত্রের। মালিকের সন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে পুলিশের এসআই আ. জলিলের নাম। তিনি নিজেও মালামাল ছাড়িয়ে নিতে থানায় হাজির হন; তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বুধবার অবৈধ মালামালের জব্দ করার পর দারুস সালাম থানা পুলিশ অবশেষে বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে পাঠায়। আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। 
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, অপরাধীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ নানা জিনিসপত্র বেশিরভাগ সময় রেখে দিতেন নিজের কাছে। অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দিতেন অপরাধীকে। সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে অর্থ আদায় করাও ছিল তার কাজ। তার কাছ থেকে বিভিন্ন অস্ত্রের গুলি উদ্ধারের বিষয়টি উদ্বেগজনক। এর মানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার সখ্যও ছিল। কারণ সখ্য ছাড়া সাধারণত কেউ অস্ত্র-গুলি ক্রয়-বিক্রয় করে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, এসআই আ. জলিলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কোথা থেকে মাদক এবং গুলি এসেছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ব্যক্তি পুলিশের অপরাধের দায় তার নিজের ওপরই। তার কাছ থেকে যা উদ্ধার করা হয়েছে, তা সে কোথায় পেয়েছে এবং এসব দিয়ে কী করত জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার বিকালে দারুস সালাম থানার দক্ষিণ কল্যাণপুরের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে মালামাল লোড-আনলোড করছিল কর্মচারীরা। এসময় ফাইল কেবিনেটের ভেতর থেকে মদের গন্ধ আসতে থাকে। ঝাঁকি লেগে স্টিলের ফাইল কেবিনেটের ড্রয়ারের তালা খুলে গেলে কর্মচারীরা ভেতরে বিয়ার, গুলি ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন অবৈধ মালামাল দেখতে পায়। পরে খবর নিয়ে জানা যায়, মালামালগুলো এসআই আ. জলিল মাতুব্বরের। তিনি নিজেও মালমাল দাবি করে তা ছাড়িয়ে নিতে চান; কিন্তু পুলিশ অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ ৬৩ ধরনের অবৈধ মালামাল জব্দ করে। জব্দকৃত মালামালের দাম ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫০ টাকা। আগ্নেয়াস্ত্র-মাদক ছাড়াও উদ্ধার হওয়া মালামালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণের চেইন, স্বর্ণের দুল, নাকফুল, চারটি কেঁচি, চারটি চাকু, হাতুড়ি, স্যামসাংসহ বিভিন্ন কোম্পানির ২৭টি মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালামাল। 
দারুস সালাম থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কুরিয়ার সার্ভিসের বুকিং স্লিপ এবং ফাইল কেবিনেট পর্যালোচনা করে এসআই জলিলের পরিচয় পাওয়া যায়। বুকিং করার সময় দেওয়া নম্বরে তাকে ফোন করলে তিনি থানায় আসেন। জব্দ করা অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ মালামাল তার বলে স্বীকারও করেন। তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ভ্যানযোগে জব্দকৃত মালামাল নারায়ণগঞ্জের সুন্দরবন কুরিয়ারে বুকিং করেন। মালামালগুলো গোপালগঞ্জের সুন্দরবন অফিস থেকে তার গ্রহণ করার কথা ছিল। বুকিং স্লিপ এবং প্রাপক স্লিপে তার নিজের নাম-ঠিকানাই উল্লেখ করা হয়। তিনি আরও জানান, নারায়ণগঞ্জের ডিবির এসআই থেকে তিনি গোপালগঞ্জে ২ ফেব্রুয়ারি বদলি হন। তাই মালামাল তিনি গোপালগঞ্জে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে মালামালের বৈধ উৎসের ব্যাপারে তিনি কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। মালামালের উৎসের ব্যাপারে তিনি একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। 
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং নারায়ণগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশে থাকাকালীন দাপিয়ে বেড়াতেন কনস্টেবল থেকে এসআই হওয়া আ. জলিল মাতুব্বর। সব অপরাধের রাজা ছিলেন তিনি। মাদক থেকে অস্ত্র ব্যবসা সব ছিল তার দখলে। এছাড়া অস্ত্র এবং মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অবৈধ মালামাল তিনি জমা দিতেন না। পরে উদ্ধার হওয়া মালামাল বিক্রি করতেন। তিনি সবসময় সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতেন। মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে ডিবি পুলিশের এসআই হওয়ায় ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন না। দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, এসআই জলিল মাতুব্বরের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তের জন্য রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে কনস্টেবল হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন আবদুল জলিল মাতুব্বর। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হয়েছেন।