বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের বিটুমিন প্লান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শনিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অন্যরা - আলোকিত বাংলাদেশ
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিটুমিন নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি; কিন্তু সমাধান পাইনি। আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খায় এমন বিটুমিন পাচ্ছিলাম না। যে বিটুমিন ব্যবহার হতো তা দিয়ে দেশের রাস্তাগুলো টেকসই হতো না। এখন থেকে আর বিটুমিন আমদানি করতে হবে না। বসুন্ধরার প্লান্টে উৎপাদিত বিটুমিন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পৌঁছে যাবে। এটাই দেশের জন্য বড় অর্জন।
শনিবার কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের বিটুমিন প্লান্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান তানভীর, বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সানভীর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর এবং ওয়ালিদ সোবহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করা সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টই দেশের প্রথম কোনো বেসরকারি বিটুমিন প্লান্ট। ‘রোড টু দ্য ফিউচার’ স্লোগানে সড়ক নির্মাণে উন্নত বিটুমিনের জোগান দেবে এ প্লান্ট।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, এতদিন বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী গুণগতমানসম্পন্ন বিটুমিনের জোগান কম ছিল। আমদানিকৃত বিটুমিন দিয়ে তৈরি করা রাস্তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়; কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে বিটুমিন উৎপাদনের এ উদ্যোগ অসাধারণ। শুধু বসুন্ধরা নয়, সরকারি সহযোগিতায় পুরো বেসরকারি খাত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ দেশের প্রতিটি মানুষের হাত ধরে বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তরিত হবে। দেশের মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ কাজে দেশের ব্যবসায়ীরা সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের পতাকা থাকবে, এ পৃথিবী টিকে থাকতে অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ওপরের দিকে থাকবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠান শুরুর আগে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল। একসঙ্গে তিন লাখ জনশক্তি কাজ করতে পারবে এমন একটি কারখানায় তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান। এ ক্ষেত্রে সরকার সার্বিক সহযোগিতা করবে। চট্টগ্রামের মীরেরসরাই ইকোনমিক জোনে অনেক জায়গা আছে, সেখানেই তৈরি হবে সে কারখানা। একইভাবে অন্যান্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে গ্রুপের কর্মকর্তার জানান, বিটুমিন মূলত একটি হাইড্রোকার্বন পণ্য। বিটুমিন জ্বালানি তেলের একটি বাই-প্রোডাক্ট। এটি মূলত রাস্তাঘাট নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। দেশে বর্তমানে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় পাঁচ লাখ টন; এর ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। বাকি ১০ শতাংশ বিটুমিন সরবরাহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি। বসুন্ধরা গ্রুপের বিটুমিন প্লান্ট থেকে বছরে সাড়ে আট লাখ টন বিটুমিন ও পিচ উৎপাদন হবে।
স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বাড়তি উচ্চমানের বিটুমিন বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছে বলে জানানো হয়। দেশে চাহিদা বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টে। বাংলাদেশে প্রতি মাসে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় ৪২ হাজার টন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রতি বছর এর চাহিদা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সড়কে ব্যবহারের জন্য পেনেট্রেশন গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদন ছাড়াও বসুন্ধরার প্লান্টে প্রিমিয়াম মানের পিচ উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে। এ প্লান্টে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কাটব্যাক, ইম্যুলসিফাইড, অক্সিডাইজড ও পলিমার (এসবিএস, রাবার পাউডার) উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সাধারণ পেনেট্রেশন গ্রেড (৬০-৭০/৮০-১০০) ও উন্নত গ্রেডের বিটুমিন চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বেসরকারি খাতের অবদানে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। পাওয়ার সেক্টরেও তার কোনো বিকল্প নেই। বেসরকারি খাতের অবদানে পাওয়ার সেক্টরের গতি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো অন্যান্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, অর্থমন্ত্রী একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সার্বিক সহযোগিতা পেলে অবশ্যই তিন লাখ মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারে এমন কারখানা তৈরি করব। অর্থমন্ত্রীকে কারখানা উদ্বোধন করার আহ্বানও জানান তিনি।
আহমেদ আকবর সোবহান আরও বলেন, গত কয়েক বছরে অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। মাত্র একটি সিদ্ধান্তে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রবাসী আয়। এখন শুধু হুন্ডি বন্ধ করতে পারলে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে একটি কার্যকরী পদক্ষেপের আহ্বান জানান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে সড়ক এবং মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ২২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক রয়েছে। এর বড় অংশই সম্প্রসারিত হচ্ছে। সরকার দেশের প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া জেলা পর্যায়েও সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সারা দেশে স্থানীয় সরকারের অধীনে ৩ লাখ ৫৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার কিলোমিটার পিচঢালা পাকা রাস্তা। ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকারের পুরো রাস্তাই পাকা করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। ফলে দিন দিন বাংলাদেশে বিটুমিনের চাহিদা বাড়বে।