স্পিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে জিম্বাবুয়ে, উইকেটে প্রথম থেকে বল টার্ন করবেÑ এমন উইকেট প্রত্যাশিত ছিল জিম্বাবুয়ের। সেখানে একমাত্র টেস্টে মিলেছে সবুজ ঘাসের উইকেট। প্রথম দিন শেষে সফরকারীদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আরভিন জানান, মিরপুরের উইকেট অবাক করেছে তাদের। সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে ঘাসের উইকেটে তেতে উঠেছিলেন দুই পেসার। তাদের সামলে প্রিন্স মাসভাউরে ও ক্রেইগ আরভিনের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে জিম্বাবুয়ে, আভাস দেয় বড় রানের। তবে দারুণ বল করে অফ-স্পিনার নাঈম হাসান তুলে নিতে থাকেন উইকেট, জিম্বাবুয়েকে রাখেন বেঁধে। সেই চাপ সামলে ঠিকই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন আরভিন, বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো জিম্বাবুয়ে অধিনায়ককেও শেষ বেলায় ছেঁটেছেন নাঈম (৪/৬৮)। শেষ বিকালে সেঞ্চুরিয়ানকে ফিরিয়ে নাঈম বাংলাদেশকে খানিকটা এগিয়ে রাখলেও ৬ উইকেটে ২২৮ রান তুলে নিয়েছে সফরকারীরা।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরের উইকেটে স্পিনারদের জন্য ছিল প্রবল সুবিধা। অমন কিছুই হয়তো আশা করেছিল জিম্বাবুয়েÑ প্রথম দিন শেষে নিজের বিস্ময়ের কথা জানান আরভিন। তবে মিরপুরের উইকেট তো সাম্প্রতিক সময়ে পরিচিত স্পিনস্বর্গ হিসেবেই। আরভিনও বলেছেন, ‘ঢাকার উইকেট মানেই আমরা জানি, সামনে কী হবে নিশ্চিত নয়!’ উইকেট যে তেমন থাকবে না, সেটির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগের দিনই। তবে এ উইকেট রীতিমতো ব্যাটসম্যানদের জন্য সহায়ক, প্রথম দিকের সময়টা পার করে দিতে পারলে। সে উইকেটেই স্বাগতিক পেসাররা শুরুতে দারুণ বোলিং করলেন, এরপর নাঈম সেটিকে নিয়ে গেলেন আরেকটু ওপরের পর্যায়ে। টার্ন পেলেন না তেমন, যা সম্বল পেসের বৈচিত্র্য ও ধারাবাহিকতা, নাঈম কাজে লাগালেন দুটিকেই। তার মতে, তার আজকের (শনিবার) বোলিংয়ের মন্ত্র তিনটিÑ জায়গা মতো বেশিক্ষণ বোলিং করা, পেসে বৈচিত্র্য আনা, রান বেশি না দেওয়া। নাঈম জায়গা মতো করেছেনÑ ৪টি উইকেটের ৩টিই পেয়েছেন তিনি গুড লেন্থ থেকে, এর মাঝে অন্তত দুটিতে ব্যাটসম্যান পরাস্ত হয়েছেন পেসে। ৩৬ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ৬৮ রান, ১.৮৮ হারে। টানা করেছেন ৩২ ওভার।
বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের আর কোনো জুটি না থাকায় জিম্বাবুয়েকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী নাঈম। তবে কত রানের মধ্যে থামাতে চান, সেটা স্পষ্ট করেননি। আরভিন চান ডোনাল্ড টিরিপানো-রেজিস চাকাভারা কাটিয়ে দিক দিনের প্রথম সেশন। আরভিনের প্রত্যাশাকে বুড়ো আঙুল দিতে চান নাঈম, বলেছেনও, ‘দিন শেষে উইকেট পাওয়া প্রয়োজন ছিল, সেটা পাওয়ায় নতুন করে শুরুর সুযোগ এসেছে। এখন চেষ্টা থাকবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আউট করা, ওদের যত তাড়াতাড়ি অলআউট করতে পারি তত ভালো। ওর (আরভিন) উইকেট পাওয়ার পর আর আছে চারটা। টেলএন্ডাররা ব্যাটিংয়ে আছে। এখন চেষ্টা থাকবে ভালো জায়গায় বোলিং করে ওদের তাড়াতাড়ি আউট করা।’
জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের প্রত্যাশা, তাদের লোয়ারঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা কাটিয়ে দিতে পারবে প্রথম সেশন, ‘যদি চাকাভার সঙ্গে সকালে আমি আসতে পারতাম, তাহলে খুব ভালো হতো, দুইজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান থাকতাম। টিরপোনো ব্যাট হাতে খুব কার্যকর। প্রথম সেশনটা কাটিয়ে দেওয়া নির্ভর করছে তার ও চাকাভার ওপর।’ উইকেটে বোলারদের জন্য খুব একটা সহায়তা নেই। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সহজ হয়ে এসেছে ব্যাটিং। নাঈমও মনে করেন, চাইলে লম্বা সময় টিকে থাকা সম্ভব। উইকেট নিয়ে অবাক জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক আরভিনের সাফ কথা, ‘উইকেট দেখে আমরা খুব অবাক হয়েছি। এটা বেশ ভালো উইকেট। সাধারণত অনেকেই বলে থাকে, ঢাকায় কী পাওয়া যাবে অনুমান করা কঠিন। আমি মনে করি, এটা বেশ ভালো উইকেট। আর এই কারণে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। এত টার্নিং উইকেট ছিল না। ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেট নিয়ে তো আসলে ওই রকম আলোচনা হয়নি। উইকেট যেমনই হোক, স্পিনারদের চেষ্টা থাকে একটা জায়গায় বোলিং করে রান কম দেওয়ার।’