দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত এক রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে - সংগৃহীত
ধর্মীয় এক গোষ্ঠীর
দিকে সন্দেহের তীর
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। চীনের পর একক দেশ হিসেবে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী মিলেছে। দেশটিতে করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শনিবার নতুন করে ২২৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পর দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের একজন মন্ত্রী কিম গ্যাং-লিপ বলেছেন, পরিস্থিতি ‘গুরুতর পর্যায়ে’ মোড় নিয়েছে। চীনে যেমন উহান শহরকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে দেখা হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনি দক্ষিণাঞ্চলীয় পাশাপাশি দুটো শহরÑ দেগু এবং চোংডো ভাইরাস ছড়ানোর সূত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্যাপকভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ওই অঞ্চলের শিনচিওঞ্জি নামে ক্ষুদ্র একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায় রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, দেগু এবং চোংডোতে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর কয়েকশ’ সদস্য ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া উপসর্গের কথা জানানোর পরই তাদের অনেকের শরীরেই প্রথম করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। তারপর থেকে নতুন করে ভাইরাস আক্রান্তের যেসব রোগী মিলছে তাদের সিংহভাগই চোংডো শহরের দেনাম নামের একটি হাসপাতালে রয়েছে। এ একটি হাসপাতালেই এখন পর্যন্ত ১১৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্তদের অধিকাংশই শিনচিওঞ্জি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুসারী। শনিবার পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে যে ৪৩৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ২৩১ জন অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি রোগী শিনচিওঞ্জি সম্প্রদায়ের সদস্য। শুক্রবার সরকার শিনচিওঞ্জি ধর্মীয় গোষ্ঠীর নয় হাজারেরও বেশি সদস্যকে পারবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঘরের মধ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে কীভাবে, কার সূত্রে তাদের এ সম্প্রদায়ের এতজন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।
তবে জানা গেছে, চোংডোতে দিন পনের আগে শিনচিওঞ্জি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতার ভাইয়ের মৃত্যুর শেষকৃত্যে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। তারপরই ওই সম্প্রদায়ের ৫০০ এরও বেশি অনুসারী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার নানা উপসর্গের কথা জানায়। দেগু এবং চোংডো এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এই দুই শহরের লোকজনকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরুনোর পরামর্শ দিয়েছে। দেগু দক্ষিণ কোরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর। ২৫ লাখ জনসংখ্যার এ শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দুই দিন ধরে রাস্তায় মানুষজন বলতে গেলে চোখেই পড়ছে না। দেগুর একজন বাসিন্দা বলেন, তার ভয় হচ্ছে যে দেগুর পরিণতি যেন চীনের উহান শহরের মতো না হয়।
ওদিকে শুক্রবার আরও একজন সেনা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার সেনাদের সেনা ছাউনির বাইরে আসা আপাতত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাসজনিত রোগে দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলেও, মৃতের সংখ্যার বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিবিসি