আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

তিস্তার বুকে পানির খরা

উত্তরাঞ্চলে হুমকির মুখে কৃষি ও জীববৈচিত্র্য

| সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সার্বিক কৃষি খাত তিস্তার পানিপ্রবাহের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। অথচ এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তা এখন পানিশূন্যতায় ভুগছে। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পর্যাপ্ত পানি নেই তিস্তা নদীতে। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প এলাকার ৪৬ হাজার হেক্টর জমি সেচ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব জমিতে বোরো ধান চাষ করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেচ দিতে হবে কৃষককে। অপরদিকে পানিশূন্য তিস্তায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। লক্ষণীয় বিষয়, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। কিন্তু সেচের জন্য পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ কিউসেক, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেচ প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, গেল বছর ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পানি সরবরাহ করা হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টরে। এরপরও ৪৩ হাজার  হেক্টর জমি সেচ-সুবিধার বাইরে ছিল। ২০১৪ সালে বোরো মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সেচ দেওয়া হয় মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেচ দেওয়া হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৭ সালে মাত্র ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ হাজার হেক্টরে দাঁড়ায়। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেচ দিলে কৃষকের হেক্টরপ্রতি বাড়তি খরচ হয় ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে ৪৩ হাজার হেক্টরে কৃষকের বাড়তি খরচ পড়বে ৬৫ কোটি টাকার বেশি। 
আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদী নীতিমালাকে উপেক্ষা করে তিস্তার ভারতীয় অংশের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে দেশটি এককভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করায় এমনটা ঘটছে। দেখা যায়, প্রয়োজন ছাড়াই বর্ষাকালে তারা অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে ডুবে যায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকা। আবার গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি দেওয়া না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় সার্বিক কৃষি খাত ও জীববৈচিত্র্য। অথচ এসব সংকট দূরীকরণে তিস্তা চুক্তি নিয়ে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারতের আলোচনা অনেক পুরোনো। সর্বশেষ ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। সেদিন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকায় এলেও মমতা ব্যানার্জি একমাত্র তিস্তা চুক্তি না করতে ঢাকায় আসেননি। অবশ্য সে সময় চুক্তির একটা খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল। খসড়া চুক্তি মতে, পানি প্রবাহের জন্য ২০ শতাংশ রেখে বাকি ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪০ শতাংশ করে ভাগ করে দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আসা নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সুসম্পর্ক তৈরি হলেও চুক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। মাঝখান থেকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মানবিক কারণ বিবেচনা করে ভারতকে ফেনী নদী থেকে পানি দেওয়ার অঙ্গীকার করে।
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য বণ্টন বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। মানবিক কারণে ফেনী নদীর পানির ভাগ ভারতকে দেওয়া হলে অভিন্ন নদী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশ পাবে না কেন? ভারত সরকার তাদের অভ্যন্তরীণ বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টনে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরে এগিয়ে আসবে এবং তিস্তার বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবেÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা। হ