দান করলে শুধু সওয়াবই হয় না। দান ব্যবসার চলতি মূলধন বৃদ্ধি করে, ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করে। ব্যবসা-বাণিজ্যে দানের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সম্পদ খরচ করে, তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি বীজের মতো, যা জমিনে বপন করার পর তা থেকে সাতটি ছড়া জন্মে এবং প্রতিটি ছড়ায় ১০০ করে দানা থাকে। আর এভাবে আল্লাহ যাকে চান তার জন্য আরও বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, মহাজ্ঞানী।’ (সূরা বাকারা : ২৬১)।
আল্লাহর রহমত ব্যতীত শুধু পরিশ্রম করার মাধ্যমে সাফল্য লাভ করা যায় না। দানের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে আল্লাহর রহমত আসে। দান আজাব-গজব দূরে ঠেলে দেয়। দানকারীর ব্যবসা-বাণিজ্য সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামার আগেই দান করতে হবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে দান করো, তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগে। অন্যথায় অনুশোচনা করে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, যদি আপনি আমাকে অল্প কিছুদিন সময় দিতেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সূরা মুনাফিকুন : ১০)। ‘হে মোমিনরা! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা তোমরা দান করো, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোনো বেচাকেনা, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ।’ (সূরা বাকারা : ২৫৪)।
সবসময় উত্তম বস্তু বা প্রিয় বস্তুকে দান করতে হবে। হালাল উপার্জন তথা বস্তু দান করতে হবে। হারাম বস্তু দান করা যাবে না। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা নিজেরা যা অর্জন করেছ, সে পবিত্র (সম্পদ) এবং যা আমি জমিনের ভেতর থেকে তোমাদের জন্যে বের করে এনেছি, তার থেকে উৎকৃষ্ট অংশ ব্যয় করো, নিকৃষ্টতম অংশগুলো বেছে রেখে তার থেকে ব্যয় করো না, যা অন্যরা তোমাদের দিলে তোমরা তা গ্রহণ করবে না, অবশ্য যা কিছু তোমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ করো তা আলাদা।’ (সূরা বাকারা : ২৬৭)। ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ সাওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় দান কর। আর তোমরা যা কিছু দান করবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ ভালো জানেন।’ (সূরা আল-ইমরান : ৯২)।
সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় সাধ্য মোতাবেক দান করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা দানকারীর মনের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন। তিনি নিয়ত অনুযায়ী বরকত দান করে থাকেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সচ্ছল হোক কিংবা অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধগুলো যারা মাফ করে দেয়; ভালো মানুষদের আল্লাহ পাক ভালোবাসেন।’ (সূরা আল ইমরান : ১৩৪)। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহর হাত পরিপূর্ণ। তোমরা রাত-দিন খরচ করলেও তা কমবে না। তোমরা কি দেখ না, যখন থেকে আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে (তিনি) কী পরিমাণ খরচ করেছেন? এত পরিমাণ খরচ করার পরও তার হাতের সম্পদে কোনো কমতি হয়নি। (বোখারি : ৪৩২৭)। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, তুমি খরচ কর, আমি তোমার জন্য খরচ করব। (বোখারি : ৪৯৬১)।
সুতরাং যারা প্রকাশ্যে ও গোপনে সাধ্য মোতাবেক এখলাসের সঙ্গে দান করবে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কোনো ভয় থাকবে না। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা দিন-রাত প্রকাশ্যে ও সংগোপনে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের মালিকের দরবারে তাদের এ দানের প্রতিফলন (সুরক্ষিত) রয়েছে, তাদের ওপর কোনো রকম ভয়ভীতি থাকবে না, তারা চিন্তিতও হবে না।’ আল্লাহ সব ব্যবসায়ীকে দানের কল্যাণ লাভের তৌফিক দান করুক।