বরিশালের মেঘনা, কীর্তনখোলা, সন্ধ্যা, সুগন্ধ্যাসহ বিভিন্ন নদীতে নির্বিচারে নানা প্রজাতির মাছের পোনা নিধন চলছে। অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ বেহেন্দি জাল, চরগড়া ও মশারি জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধনে মেতে উঠেছে। মৎস্য অধিদপ্তর কম্বিং অপারেশনসহ বিভিন্ন অভিযান চালালেও মাছের পোনা নিধন থামছে না। এতে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।
জানা গেছে, বরিশালের বানারীপাড়ার উপজেলার সন্ধ্যা নদীসংলগ্ন সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ, পৌরসভার দক্ষিণ নাজিরপুর ও সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, তালাপসাদ, জিরারকাঠি, সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের খেজুরবাড়ি ও চাখার ইউনিয়নের মীরেরহাট গ্রামের কিছু জেলে নদীতে নিষিদ্ধ বাঁধা জাল দিয়ে মাছের পোনা মাছ নিধন করছে। এসব মাছের পোনা ‘গুঁড়া মাছ’ বলে হাট ও বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা প্রশাসন কিংবা মৎস্য দপ্তর থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেশি মুনাফালোভী জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করছে। বানারীপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ বলেন, প্রায়ই জালসহ অসাধু জেলেদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হচ্ছে। এ অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীতে। সেখানেও জেলেরা গুঁড়া মাছের নামে নানা ধরনের ছোট মাছের পোনা নিধন করছে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে। যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছ।
বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর সায়েস্তাবাদ, তালতলী, চরমোনাই এলাকায় নিষিদ্ধ বাঁধা জাল দিয়ে অবাধে নিধন চলছে জাটকাসহ বিভিন্ন মাছের পোনা। তালতলির স্থানীয় বাজার কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোর হলেই এখানে নানা ধরনের মাছের পোনা ধরে নিয়ে আসা হয়। সবচেয়ে বেশি আসে জাটকা। সেগুলোকে বলা হয় চাপিলা মাছ। এছাড়া বেলে, রুই, কাতলের পোনা ও গুঁড়া মাছ বলে বিক্রি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনাসংলগ্ন হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় মাছের পোনা নিধন চলছে অবাধে। নিষিদ্ধ বেহেন্দি (বাঁধা) জাল, চরগড়া ও মশারি জাল দিয়ে দেদারছে নিধন চলছে মাছের পোনা। এতে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছ। হিজলার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারে ঝুড়ি ভরে মাছের পোনা বিক্রি হচ্ছে ‘গুঁড়া মাছ’ বলে। তাতে নিধন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মাছের পোনা। তিনি বলেন, মৎস্য কর্মকর্তারা যে অভিযান পরিচালনা করে তা কার্যকর নয়। মেহেন্দীগঞ্জের সংবাদকর্মী মনির হোসেন বলেন, মাছের পোনা যেভাবে নিধন হচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছই খুঁজে পাওয়া যাবে না। সকাল হলেই ঝুড়ি ভরে বাজারে বাজারে মাছের পোনা বিক্রি চলছে প্রকাশ্যে। মৎস্য অধিদপ্তর যে অভিযান পরিচালনা করে তাতে কোনোভাবেই থামছে না মাঠের পোনা নিধন।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, জেলেরা বেহেন্দি (বাঁধা) জাল, চরগড়া ও মশারি জাল দিয়ে এ অঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে মাছের পোনা নিধন করছে। এটি বন্ধের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর কীর্তনখোলা, মেঘনা, সন্ধ্যা, সুগন্ধ্যা নদীতে কম্বিং অপারেশন করেছে। আগামী মাসে পোনা নিধন রক্ষায় অভয়াশ্রমের আশপাশে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।