আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

‘সেবা বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও দক্ষিণ এশিয়ায় সেবা বাণিজ্য চুক্তির বিশ্লেষণ’

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
| খবর

 

বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ সেবা খাত। বৈশ্বিক বাণিজ্যের এক তৃতীয়াংশ থেকে প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত সেবা খাতসংশ্লিষ্ট। উন্নত দেশগুলোর জিডিপির ৭৪ শতাংশ আসে (এপ্রিল ২০১৩) সেবা খাত থেকে। ওইসিডি দেশগুলোর জিডিপির ৭৩ শতাংশ (মে ২০১৪), এপেকভুক্ত দেশগুলোর জিডিপির ৫০ শতাংশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জিডিপির ৫১ শতাংশ (এপ্রিল ২০১৩)। সেবা খাতের বাণিজ্য বাধামুক্ত করার বিষয়টি উরুগুয়ে রাউন্ডের বৈশ্বিক বাণিজ্য আলোচনার ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়। ফলে সম্পাদিত হয় আন্তর্জাতিক সেবা চুক্তি বা জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসেস (গ্যাটস)। 
সেবা বাণিজ্যসংক্রান্ত স্পষ্ট আইন ও বিধিবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে সেবা বাণিজ্য উত্তরোত্তর উদারীকরণের লক্ষ্যে এবং বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও পূর্বাভাস যোগ্যতা আনতে গ্যাটসে বাংলাদেশসহ সদস্য দেশগুলো স্বাক্ষর করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পরস্পরের জন্য ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদারে আন্তঃআঞ্চলিক বিনিয়োগ ও উৎপাদনের সুযোগ সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১০ সালের এপ্রিলে এ অঞ্চলের দেশগুলো সেবা বাণিজ্য সহজীকরণ ও জোরদারের লক্ষ্যে সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন ফ্রি ট্রেড ইন সার্ভিসেস (সাটিস) ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে স্বাক্ষরিত এবং ২০১২ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয়। বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দপ্তরে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এবং পুরো অঞ্চলে বাণিজ্য ও সেবার মন্থরগতির কারণে চুক্তিটি প্রথম থেকেই হোঁচট খেতে থাকে। 
গ্যাটসের আওতায় সেবা বাণিজ্য সম্পাদন নির্ভর করে সেবাসংক্রান্ত লেনদেনের সময় সেবাদাতা ও সেবা ক্রেতার সরেজমিন উপস্থিতির ওপর। এ চুক্তিতে সেবা বাণিজ্যের চারটি ধরন-শ্রেণি চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ক. আন্তঃসীমান্ত সেবা সরবরাহ : বিমানযোগে পরীক্ষণ নমুনা (ল্যাব স্যাম্পল) পরিবহন, চিকিৎসা শিক্ষা, ইন্টারনেটে পরামর্শ দেওয়া ইত্যাদি। খ. প্রবাসকালীন ভোগ-ব্যবহার : চিকিৎসাসেবার জন্য এক দেশ থেকে রোগীদের অন্য দেশে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। গ. বাণিজ্যিক উপস্থিতি : নিজ দেশ ছাড়িয়ে বাণিজ্যিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন দেশে সরেজমিন উপস্থিতি বা অন্য দেশের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে অফিস স্থাপন, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। সর্বশেষ ধরন ঘ. ন্যাচারাল পারসন বা ব্যক্তির উপস্থিতি : আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলীরা নিজ দেশের বাইরে ভিন্ন দেশে পেশাগত কাজ করলে তা এর আওতায় পড়বে। সেবা বাণিজ্যের অনস্বীকার্য গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সাটিস সম্ভাব্য আন্তঃআঞ্চলিক সেবা বাণিজ্য জোরদারের লক্ষ্যে কাজ করছে। সদস্য দেশগুলো তাদের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা ও (সেবা বাণিজ্যসংক্রান্ত) উত্তম নীতিমালা বিনিময় শুরু করেছে। সাটিসের মূল লক্ষ্য হলো সার্ক অঞ্চলের মধ্যে সেবা বাণিজ্য উদারীকরণের পরিকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এ অঞ্চলে সেবা বাণিজ্যের লাভজনক ও সুষম অগ্রগতি সাধন। বাণিজ্যিক সেবার বেশিরভাগ খাত-উপখাতে ব্যাপকভিত্তিক উদারীকরণ নিশ্চিত করা এবং একইসঙ্গে অনুরোধ ও প্রস্তাবের (রিকোয়েস্ট-অ্যান্ড-অফার অ্যাপ্রোচ) ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোয় আলোচনা অব্যাহত রাখাও সাটিসের লক্ষ্য। সেবা বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে গৃহীত বাণিজ্য উদারীকরণ কর্মসূচিতে যেসব কাজ করা যাবে না তা হলো : সেবা সরবরাহকারীর সুযোগ সীমিত করা; লেনদেনে সংখ্যাগত কোনো সীমা আরোপ করা; কোটা বলবৎ করা; বিদেশি শেয়ারে সীমা আরোপ করে বা বৈদেশিক বিনিয়োগের মোট পরিমাণ বেঁধে দিয়ে সেবা খাতে বিদেশি পুঁজির আগমন ও উত্থানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে না। যদিও সার্কের ভেতরে সাটিস নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, পূর্ণ সুফল পেতে হলে আগে সাফটা যথাযথভাবে কার্যকর হতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় পণ্যবাণিজ্যের তুলনায় সেবা বাণিজ্য অধিকতর পারস্পরিক।