আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

বিদেশে পালানোর সময় স্বামী-স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৪

গাড়ি ব্যবসার আড়ালে ভয়ংকর অপরাধ

বারের বিলই প্রতিদিন আড়াই লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
| শেষ পাতা

রাজধানীর বিএফডিসি সংলগ্ন এলাকায় পার্টনারশিপে ‘কার একচেঞ্জ’ গাড়ি ব্যবসা শুরু করেন শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। পিউয়ের স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনও নরসিংদীতে গাড়ি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। নরসিংদীতে তাদের গাড়ির শোরুম রয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যবহার করে স্বামী-স্ত্রী বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য শুরু করেন। এরপর অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তারা। অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজি এবং নারী পাচার করে অল্প সময়ের মধ্যে নংসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল নগদ অর্থের মালিক হয়ে যান। একপর্যায়ে গাড়ি ব্যবসার আড়ালে হয়ে উঠেন ভয়ংকর অপরাধী। অবৈধ টাকা উপার্জন করে ওই টাকা পাচার করতেন বিদেশে। এছাড়াও তারা জাল টাকা, ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাচারেও জড়িত ছিলেন। 

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে পালানোর সময় পাপিয়া ও তার স্বামী সমুনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন র‌্যাব-১ সদস্যরা। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেনÑ পাপিয়ার পিএস সাবিক্ষর খন্দকার ও সুমনের পিএস শেখ তায়্যিবা। 

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, পাপিয়া একজন আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাফিয়া চক্রের সদস্য। তার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। পাপিয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যেতেন। এমনকি একজন মুসলিম নারী হয়েও কালী সাধক ছিলেন। নিয়মিত কালীপুজা করতেন পাপিয়া। 

তিনি জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বরে হোটেল ওয়েস্টিনের ২১তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষটি ভাড়া নেন পাপিয়া। তিন মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। ১৯তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি তিনি পুরোটাই বুক করে নিতেন। সেখানে প্রতিদিন তিনি আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায়, তিন মাসে তিনি প্রায় ৩ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষকে।

লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে  জালটাকা প্রস্তুতসহ নরসিংদী ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও নারীসংক্রান্ত অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও নরসিংদী জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজির করে আসছিলেন পাপিয়া ও সুমন। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া জানান, তিনি একজন ব্যবসায়ী। তেজগাঁও বিএফডিসি গেট-সংলগ্ন এলাকায় অংশীদারিত্বে তার একটি ‘কার একচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শোরুম আছে। এছাড়া নরসিংদী জেলায় তার ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো গাড়ি ব্যবসার আড়ালে
সলিউশন’ নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এসব ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি সমাজসেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে বলে জানায়। বছরের অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেন। সেখান থেকে তার ও তার স্বামীর ব্যবসায়িক অংশীদারদের অনৈতিক কাজে নারী সরবরাহ করেন। 
লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল আরও জানান, পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, দেশে তার স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে তার বারের ব্যবসা আছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন। তিনি তার স্ত্রীর মাধ্যম প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন। অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মের জন্য নরসিংদী এলাকায় তার কুখ্যাতি রয়েছে। নরসিংদীতে ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামক প্রতিষ্ঠানটি গাড়ি সার্ভিসিংয়ের আড়ালে তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মাদক ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হয়। নরসিংদী এলাকায় তার একটি ক্যাডার বাহিনী আছে, যাদের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড করে থাকেন। সেখানে একটি টর্চার সেল রয়েছে। শহরের বাইরে গেলে তার ক্যাডার বহিনী তাকে বিশাল গাড়ি বহরের মাধ্যমে মহড়া দিয়ে থাকে। বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল নগদ অর্থের পাশাপাশি নংসিংদী ও ঢাকায় তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট আছে বলে জানা যায়।  
জিজ্ঞাসাবাদে সুমন আরও জানান, সাবিক্ষর খন্দকার পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)। সব সময় পাপিয়ার সঙ্গে অবস্থান করে সে। এমনকি পাপিয়ার ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনা করে সে। পাশাপাশি তার সব অবৈধ ব্যবসা এবং অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি দিতে সহযোগিতা করে থাকে সাবিক্ষর খন্দকার।  গ্রেপ্তার শেখ তায়্যিবা সুমনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)। সম্পত্তির হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনার পাশাপাশি তার সব অবৈধ ব্যবসায় এবং অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি দিতে তাকে সহযোগিতা করে বলে জানায়।