আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কাউনিয়া রেলস্টেশনের বেহাল দশা

আবদুর রহমান মিন্টু, রংপুর
| শেষ পাতা

দুর্বল অবকাঠামো, মিটারগেজ লাইন, শত বছরের পুরোনো ভবন, ভাঙা সিগন্যাল ও এনালগ পদ্ধতিতে চলছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কাউনিয়া রেলজংশন। এটি রংপুরের তিন জেলার সংযোগস্থল কাউনিয়া হয়ে ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল করে। নিরাপদ ভ্রমণ, সাশ্রয়ী মালামাল পরিবহনে মানুষের পদচারণায় মুখরিত এ জংশনটি এখন অবহেলিত। স্টেশনে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও যাত্রী সেবার মান না বাড়িয়ে বাড়ানো হয়েছে শুধু ট্রেন। বঞ্চিত এ রেলপথ রাজস্ব আয় থেকেও পিছিয়ে। দৃষ্টি নেই এর আধুনিকায়নে। 

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত রংপুরের এ কাউনিয়া রেলজংশন ব্রিটিশ শাসনামলে ভারত উপমহাদেশে আরামদায়ক নাগরিক চলাচল এবং সুলভে পণ্য পরিবহনের জন্য ১৯০৫ সালে চালু হয়। রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামসহ দেশ-বিদেশের সংযোগের রেলপথের অন্যতম জংশন কাউনিয়া রেলস্টেশন। রেলপথে রংপুর থেকে ঢাকা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর যেতে হলে কাউনিয়া রেলওয়ে জংশন অতিক্রম করতে হয়। প্রতিদিন এ স্টেশন দিয়ে শত শত যাত্রী যাওয়া-আসা করেন। এই রেলওয়ে জংশন হয়ে প্রতিদিন ২৮টি ট্রেন চলাচল করে। এ অঞ্চলের  মানুষ ও পণ্য পরিবহনে জনসমাগম বৃদ্ধি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কাউনিয়া

পাওয়ায় রেলবাজারসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের আকর্ষণীয় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে এ জংশন এলাকা। কালের বিবর্তনে রেলপথ চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় আয় কমে লোকসান বাড়ায় কমেছে জৌলুস। ১৯৬৯ সালে রেলযোগে গণসংযোগ করতে রংপুরের কাউনিয়ার এ জংশনে আসেন বঙ্গবন্ধু। এ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন এবং স্বাধীনতার যুদ্ধে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। এ কারণে রেলস্টেশনটি ও রেলপথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ইতিহাস ও কালেরসাক্ষী ঐতিহ্যবাহী এ স্টেশনটি আজ অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে। 
কাউনিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা সরদার আবদুল হাকিম বলেন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে আমাদের বিশ্ব নেতা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ও পরে কীভাবে সারা দেশে ঘুরেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে গেছেন। আজ রংপুরের অনেকে জানেন না যে, রেলযোগে গণসংযোগ করতে কাউনিয়ায় বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। আর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভাষণও দিয়েছিলেন। সে সময় যারা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর দর্শন করেছেন, তাদের অনেকে মারা গেছেন। তাই দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক কাউনিয়ার এ স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর নামে করে গেটে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল স্থাপন করার দাবি জানান তিনি। এ পথে চলাচলকারী কয়েকজন ট্রেনের যাত্রী জানান, শত বছর আগে যে রেলস্টেশনে মানুষের কোলাহল, ইঞ্জিনের হুইসেল এবং কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত ছিল, এখন সেখানে যাত্রীদের বিশ্রামাগার ও শৌচাগার না থাকায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও দুর্গন্ধে যাত্রীদের বিমুখ করছে। সেইসঙ্গে যাত্রীসেবা নিম্নমানের ও অনিরাপদ ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। কাউনিয়া জংশনের স্টেশন মাস্টার বাবু আল রশিদ এ রেলস্টেশনের বেহাল দশা স্বীকার করে বলেন, সরকার রেলপথ আধুনিকীকরণ করতে নানা প্রকল্প গ্রহণ করছে। 
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, জনবল সংকটসহ নানাবিধ কারণে রংপুর অঞ্চলের রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা অবহেলিত। সরকারের এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বেসরকারি বাস মালিকরা। মহাসড়কে কে কার আগে যাবেÑ এ প্রতিযোগিতায় প্রতিনিয়ত সারা দেশের সড়কে ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। তার উপর ভাড়াও অনেক বেশি। এজন্য রংপুরসহ উত্তরের আট জেলার ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন সংস্কার করে ডুয়েল ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশন সংস্কার ও ডিজিটাল কার্যক্রম চালু করলে হয়তো আবারও প্রাণ ফিরে পাবে এ অঞ্চলের রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা। 
সাশ্রয়ী মূল্যে যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণে উত্তরাঞ্চলে শুধু ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে নয় ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ, যাত্রী সেবার মান বাড়ানোসহ এ স্টেশনের আধুনিকীকরণে সরকারের সহযোগিতা চান এলাকাবাসী।