চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে বাড়ছে এর প্রাদুর্ভাব। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এরই মধ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। এই সম্পাদকীয় লেখার সময়ে একনজরে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি এরূপ : চীনে মৃত্যু ২ হাজার ৪৪২ জন, চীনের বাইরে মৃত্যু ২০ জন। এক হিসাবে চীনের বাইরে ৩০টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের বিস্তার হয়েছে। চীন ও চীনের বাইরে মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত স্বস্তি যে, বাংলাদেশে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে সিঙ্গাপুরে কোভিড রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ বাংলাদেশি আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ জন। এ পরিস্থিতিতে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে গেলে কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সংস্থাটির এই পরামর্শ ইতিবাচক, পাশাপাশি এটাও জানার আগ্রহ মহামারি ঠেকাতে আমরা কি টেকসই প্রস্তুতি নিয়েছি? এর সদুত্তর নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে।
গেল জানুয়ারিতে চীনে করোনা ভাইরাস বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সংগত কারণেই আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। এর পেছনে কারণ হিসেবে ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এবং এটি এখন শুধু চীনের উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। চীনে এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার কমে এলেও উদ্বেগ কমেনি, সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুসের সাম্প্রতিক মন্তব্যে তা স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম, তবে যে প্যাটার্ন বা ধরনে এ রোগের সংক্রমণ ঘটছে, তা উদ্বেগজনক। কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা বা চীন সফর না করেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ইরানে নতুন করে সংক্রমণ ঘটা ও মৃত্যুর ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।
এটা বলা যায়, স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সত্ত্বেও আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানের ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের মতে, চীনসহ অন্যান্য দেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর এখনও সুযোগ রয়েছে। তবে যেসব দেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বল, সেখানে এ রোগের বিস্তার নিয়ে সংস্থাটির উদ্বেগ রয়েছে। এ বিষয়টি স্মরণে রেখে আমাদের যথোচিত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যেহেতু করোনা ভাইরাস এখন আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে, সংগত কারণেই সম্ভাব্য মহামারি ঠেকাতে অন্য দেশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার পন্থা অবলম্বন করতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে এ নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।