দুধের পুষ্টিগুণ বিচারে এটি মহান আল্লাহ তায়ালার বড় একটি নেয়ামত। এ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। তার উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।’ (সূরা নাহল : ৬৬)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘মুত্তাকিদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত : তাতে আছে নির্মল পানির নহর, দুধের নহর, যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়। (সূরা মুহাম্মদ : ১৫)।
প্রিয়নবী (সা.) দুধ খুব পছন্দ করতেন। মেরাজের রাতে নবী করিম (সা.) এর সামনে জিবরাইল (আ.) দুধ আর মধু পেশ করে যেকোনো একটি গ্রহণ করার নিবেদন করেন। নবী করিম (সা.) দুধ গ্রহণ করে পান করেন।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে আমি ও খালেদ ইবনে ওলিদ (রা.) মাইমুনা (রা.) এর ঘরে গেলাম। মাইমুনা (রা.) আমাদের দুধ পান করতে দিলেন। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ডানে ছিলাম আর খালিদ বিন ওলিদ (রা.) ছিলেন তাঁর বামে। রাসুলুল্লাহ (সা.) দুধ পান করে দুধের পেয়ালা আমাকে দিয়ে বললেন, ‘তুমি যদি চাও তাহলে খালিদকে আগে দিতে পার।’ আমি বললাম, ‘আপনার মুখের ঝুটা আমার আগে কাউকে পান করতে দেব না।’ এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যে কাউকে দুধ পান করায়, সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাদের জন্যে এতে বরকত দান করো।’ তিনি আরও বললেন, ‘দুধের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার বা পানীয় নেই।’ (মুসনাদে আহমদ : ৩০২/৩)।
অন্য হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) দুধ পান করে কুলি করলেন এবং বললেন, ‘দুধে প্রচুর চর্বি আছে।’ (বোখারি : ৬৭২৬)।
আনাস (রা.) বলেন, ‘আমার এই পানপাত্র দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সা.) কে সব ধরনের পানীয় যেমনÑ মধু, নবিজ, পানি ও দুধ পান করিয়েছি।’ (মেশকাত : ৩৭৬/১)।
দুধ খুবই উপকারী পানীয় দ্রব্য। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে দুধকে বলা হয় ‘সুপারফুড’। দুধে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, মিনারেল রয়েছে যা দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটিও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। উদয়াস্ত কর্মব্যস্ততার পর শরীরের সব ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস দুধই যথেষ্ট। আসুন জেনে নেই দুধ পানের কিছু উপকারিতা।
মজবুত হাড় ও দাঁত গঠন : দুধ ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস। ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডির সাহায্যে আমাদের হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে হাড় ও দাঁতের গড়ন দৃঢ় করে এবং দাঁতের ক্ষয়রোধ করে।
মাংসপেশির উন্নত গঠন : দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, যা মাংশপেশি গঠনে অনেক বেশি সহায়তা করে। দুধ মাংশপেশির আড়ষ্টতাও দূর করে।
ওজন কমানোর সহায়ক : প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধ পান করলে অন্যান্য খাবারের চাহিদা অনেকাংশে কমে যায়। নাস্তার সময় দুধ পান করলে অনেকটা সময় দুধ পেটে থাকে। ফলে আজেবাজে খাবারের চাহিদা কমে। এতে ওজনও কমে যায়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে : দুধে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, মিনারেলস ও নানা পুষ্টিগুণ। প্রতিদিন দুধ পান করলে ত্বকে এর বেশ ভালো প্রভাব পড়ে। ত্বক হয় নরম, কোমল ও মসৃণ।
বুক জ্বালাপোড়া বন্ধ করে : অনেক ধরনের খাবার আমরা খাই, যার ফলে আমাদের অ্যাসিডিটি হয় এবং বুক প্রচ- জ্বালাপোড়া করে। এর সবচেয়ে সহজ এবং সুস্বাদু সমাধান হচ্ছে দুধ পান। দুধ পানে পাকস্থলী ঠা-া হয় এবং বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর হয়।
এছাড়া নিয়মিত দুধ পান করলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়, অন্যান্য খাবারের বিষাক্ত উপাদানের ক্ষতি কাটায়, শরীরে সেরোটোনিনের (ঝবৎড়ঃড়হরহ) পরিমাণ বেড়ে যায় (যা ‘ব্রেইন ক্যামিকেল’ নামে পরিচিত। এ উপাদান শরীরে পর্যাপ্ত সৃষ্টি হলে মন ভালো থাকে, মুড ভালো থাকে)। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে, হৃৎপি-ের সামর্থ্য বাড়ে, যেকোনো ক্ষত দ্রুত সেরে যায়, দৃষ্টিশক্তি বাড়ে, শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়ে যায়। তাই সুস্থ থাকার জন্য দৈনিক দুধ পান করা সবার উচিত। শরীর সুস্থ রাখতে, মন প্রফুল্লতা বয়ে আনতে দুধের বিকল্প নেই। তাই সবার উচিত নিয়মিত দুধ পান করা।