আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৬-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

সাভার ফাঁড়ির ওসির অত্যাচারে ব্যবসায়ী বাড়ি ছাড়া

সাভার প্রতিনিধি
| খবর

সাভারের ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়িতে এক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে ফাঁড়ির ওসি এমারত হোসেনের বিরুদ্ধে। সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে পুলিশের পক্ষে দৈনিক চাঁদা আদায় করতে রাজি না হওয়ায় ব্যবসায়ীকে আহত করা হয়। সেই ব্যবসায়ী বর্তমানে বাড়ি ছাড়া।
এছাড়া চাঁদা দিতে দেরি হওয়ায় পঞ্চাশোর্র্ধ্ব এক প্রতিবন্ধী সবজি ব্যবসায়ীকেও পিটিয়ে আহত করেছেন ওই কর্মকর্তা। এ ঘটনায় প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ীকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হলেও মামলা-হামলা এবং পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অপর ব্যবসায়ী দ্বীন ইসলাম। আহত ব্যবসায়ী দুজন হলেনÑ দ্বীন ইসলাম এবং ইউনুস আলী। দুই ব্যবসায়ী প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফুটপাতে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। তাদের মধ্যে পুলিশি মামলার ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যবসায়ী দ্বীন ইসলাম। প্রতিবন্ধী ইউনুস আলী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরলেও ফিরে পাননি ব্যবসায়ীক স্থান। তার জায়গাটি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অন্য ব্যবসায়ীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন এমারত হোসেন।
ভুক্তভোগী দ্বীন ইসলাম ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৭ মাস আগে সাভার ট্যানারির ফাঁড়ির ওসি এমারত হোসেন ভয়ভীতি দেখিয়ে সবজি ব্যবসায়ী দ্বীন ইসলামকে ফুটপাত থেকে পুলিশের পক্ষে চাঁদা আদায় করতে বাধ্য করেন। এক সপ্তাহ ধরে তিনি চাঁদার টাকা আদায় করতে অপারগতা জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ আগে তাকে জোর করে একটি গাড়িতে করে হেমায়েতপুর হরিণধরা ট্যানারি ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর করা হয়। এরপর মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ফের কাজ করার শর্তে দ্বীন ইসলামকে ছেড়ে দেন এমারত। পরে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যবসায়ী দ্বীন ইসলাম। 
ইউনুস আলী জানান, তিনি প্রতিবন্ধী মানুষ। এক সময় ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা পেয়ে ভিক্ষা করা ছেড়ে দিয়ে সবজি ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিন অল্প কিছু কাঁচা সবজি কিনে পুলিশকে ৫০০ টাকা করে দিয়ে ফুটপাতে বসে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু জানুয়ারি মাসে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি ও বই কিনতে অনেক টাকা খরচ হওয়ায় পুলিশকে চাঁদা দিতে পারেননি। এজন্য এমারত তকে বেধড়ক মারধর করেছেন। 
দ্বীন ইসলামের স্ত্রী শাহানাজ আক্তার জানান, চাঁদা তুলতে রাজি না হওয়ায় তার স্বামীকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করেন এমারত হোসেন। সারাদিন মারধর করে সন্ধ্যার পর চাঁদা তুলে দেওয়ার শর্তে স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 
দ্বীন ইসলাম জানান, হেমায়েতপুর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পক্ষে চাঁদা আদায় করেন ছয় থেকে সাতজন। তিনি সবজি বাজারের প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে প্রায় ১০ হাজার টাকা আদায় করতেন। টাকা আদায় করতে দেরি হলেই পুলিশের লোকজন গালাগাল ও যখন-তখন মারধর করতেন। এজন্য আর টাকা আদায় না করার কথা বললে ওসি এমারত হোসেন তাকে বাজার থেকে ধরে নিয়ে ফাঁড়িয়ে আটকে রেখে মারধর করেন এবং কাজ না করলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। কোনো উপায় না পেয়ে তাই বর্তমানে তিনি এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।   
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের দুই পাশের ফুটপাতে ছোটবড় প্রায় তিন শতাধিক অস্থায়ী দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ফলের দোকান, চটপটির, সবজির ও বিভিন্ন পণ্যের ভাসমান দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে বসা এসব ব্যবসায়ীর মধ্যে থেকে একজনকে চাঁদার টাকা আদায় করতে বাধ্য করেছেন ওসি এমারত। প্রতিদিন আদায় করা লাখ টাকা হিসাব সন্ধ্যার পর ফুটওভার ব্রিজের নিচে ওসি এমারতের কাছে বুঝিয়ে দেন উত্তোলনকারীরা।     
দ্বীন ইসলাম ও ইউনুস আলীকে মারধর করার বিষয়ে জানতে চাইলে হেমায়েতপুর হরিণধরা ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) এমারত হোসেন জানান, এসব ব্যাপারে ফোনে কী কথা বলব, ফাঁড়িতে সাক্ষাতে কথা বলবেন। 
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরর্দার জানান, এমন কোনো ঘটনা তার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেন এ কর্মকর্তা।