আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৬-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

২০৪১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৯.৯ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
| প্রথম পাতা

অনুমোদন পেয়েছে দেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে এ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে। ফলে আগামী ২০ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৯ শতাংশ। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। উন্নত দেশে যেতে ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনাটি তৈরি করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এতে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত ২০ বছর সময়ের মধ্যে এ  ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসবে। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ বছরে। এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের হিসেবে গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর থেকে ২০৩১ সালে বেড়ে হবে ৭৫ বছর।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, উন্নত দেশে উন্নীত হতে এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে। তাছাড়া প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি তৈরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ২০১১ সালের তথ্য ধরা হয়েছে। সেটি আপডেট করতে হবে। পরিকল্পনাটির শুরুতেই একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যুক্ত করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে হবে। বয়স্ক ও ডিভোর্সী নারীদের বেশি করে ভাতার আওতায় আনতে হবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে কোনো পরিকল্পনাই হোক না কেন তা নিজস্ব সম্পদের উপরই নির্ভর করতে হবে। আগে বৈদেশিক সহায়তা নির্ভর ছিল আমাদের অর্থনীতি। এখন অনেক অগ্রগতি হওয়ায় সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ’
প্রেক্ষিত পরিকল্পনার রূপকার জিইডির সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বরাত দিয়ে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্লক চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি ইত্যাদি বিষয়গুলো যুক্ত করতে হবে। এছাড়া বৈঠকের আলোচনায় এসেছে খরা ও লবণাক্ত সহিষ্ণু জাতের ফসল আবিষ্কার বাড়াতে হবে। মাটি ছাড়া ভাসমান চাষ পদ্ধতির ব্যাপক প্রসার ঘটানোর কথাও বলা হয়েছে।
পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বৈষম্য হ্রাস, ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকছে।
পরিকল্পনায় আরও যেসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, যোগাযোগ খাতের বিশেষ উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণসহ বিভিন্ন বিষয়। অর্থাৎ একটি দেশ উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে যা যা প্রয়োজন তার প্রায় সব কিছুই পকিল্পনাটিতে আনা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালে অর্থনীতির যেসব খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি হবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি হবে দশমিক ৪ শতাংশ, মোট জাতীয় সঞ্চয় হবে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মোট দেশজ সঞ্চয় ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ, মোট বিনিয়োগ ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ, মাথাপিছু জিএনআই ১৬ হাজার ৯৯৪ ডলার এবং মোট রাজস্ব ২৪ দশমিক ১ শতাংশ।
নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনার প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০৩১ সালে দাঁড়াবে ৯ শতাংশে। সেটি আবার বাড়তে বাড়তে ২০৪১ সালে গিয়ে হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে চরম দারিদ্র্যের হার ২০২০ সালে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০৩১ সালে পৌঁছাবে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশে। সেটি পরিকল্পনার শেষ বছর ২০৪১ সালে কমে দাঁড়াবে দশমিক ৬৮ শতাংশে। অন্যদিকে মাঝারি দারিদ্র্য বর্তমান বছরের ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে কমে ২০৩১ সালে দাঁড়াবে ৭ দশমিক শূন্য শতাংশে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শেষে ২০৪১ সালে এ হার হবে ৩ শতাংশের নিচে।
খসড়া পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের জন্য নির্ধারিত উদ্দেশ্য ও উচ্চ আয়ের অর্থনীতির জন্য দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সঠিক ও সচল পথে পরিচালনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ও নীতিমালার মূল উপাদানগুলো হচ্ছে, ন্যূনতম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সংযোগ বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া কম মূল্যে প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ করা, প্রাথমিক জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ২০২১ ও ২০৪১ সালের মধ্যে নির্ধারিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হবে ৯২ হাজার মেগাওয়াটের এক বিশাল স্থাপনা। যার বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৪ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।
সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার পূরণে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমানোর জন্য সব ধরণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পরিকল্পনাটিতে। অর্থাৎ শহরের সব সুবিধা পৌঁছে যাবে গ্রামে। মানুষকে আর যে কোনো প্রয়োজনে শহরে ছুটতে হবে না। 
এর আগে দেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি (২০১০-২০২১) তৈরি করা হয়। যা বাস্তবায়ন করা হয় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১০-১৫) ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০) মাধ্যমে। ফলে ২০০৯ সালের ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি থেকে বেড়ে এখন ৮ শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে।
এসময় পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।