- গুলি অগ্নিসংযোগ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া
- পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ
- অনেক স্থানে মেট্রো রেল চলাচল বন্ধ
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনে আবারও অগ্নিগর্ভ রূপ ধারণ করেছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। মঙ্গলবার শহরটির বিভিন্ন স্থানে গুলি, অগ্নিসংযোগ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এনডিটিভি জানায়, সহিংসতায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী ছাড়াও একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। সংঘর্ষ-সংঘাতে আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অন্তত ৭০ জন।সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম ভারত সফরে দিল্লিতে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ সহিংসতা শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। এদের মধ্যে এক সাংবাদিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন দিল্লিতে ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে চলছিল ব্যাপক সংঘর্ষ। ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানান, একদল লোক পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছিল। তারা নানা সেøাগান দিচ্ছিল। অপরদিকে কিছু লোক চিৎকার করে বলছিল, ‘বিশ্বাসঘাতকদের গুলি কর।’
সংঘাত-সংঘর্ষের কেন্দ্রে রয়েছে দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চল। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, জাফরাবাদ, চান্দগড়, মৌজপুর, ভজনপুরা, করদামপুরি, গোকূলপুরি, খাজুরি ও কারাওয়ালনগরে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দিল্লির মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, ‘সহিংসতায় কেউই উপকৃত হবে না।’ এক টুইটে তিনি লিখেন, ‘দিল্লির কিছু জায়গায় যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে চিন্তিত আমি। শহরের সর্বত্র যাতে শান্তি বজায় থাকে, একজোট হয়ে আমাদেরই তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে আমার অনুরোধÑ সহিংসতা ত্যাগ করুন। যেখানে যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে, সেখানকার বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসছি আমি। পদাধিকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা হবে।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দিল্লিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এ পরিস্থিতিতে সেনা মোতয়েনের দাবি জানিয়েছেন এআইএমআইএম দলের প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি।
ফার্স্টপোস্ট ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জয়তিনগরে একদল দুর্বৃত্ত গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। খাজুরি খাস ও গামরি এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অন্তত পাঁচ বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশও। তাদের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সহিংসতা অব্যাহত বলে ফোনে লাগাতার অভিযোগ পাচ্ছি আমরা। আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন খবরে বলা হয়, সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করায় সোমবারই রাজধানীর একাধিক মেট্রোস্টেশন বন্ধ রাখা হয়। মঙ্গলবারও জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রোস্টেশন বন্ধ রাখা হয়। এসব স্টেশনে বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো চলাচলও। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সব সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলও বন্ধ রাখা হয়। একাধিক জায়গায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
সিএএ’র বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরেই অবস্থান বিক্ষোভ চলছিল জাফরাবাদ, সীলামপুরসহ একাধিক জায়গায়। কিন্তু রোববার সেখানে সিএএ’র সমর্থনে পাল্টা মিছিল করেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। তিন দিনের মধ্যে বিক্ষোভ না সরালে তারা কাউকে মানবেন না, রাস্তায় নেমে আসবেন বলে হুমকি দেন তিনি। তারপরই জাফরাবাদসহ আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। সিএএ বিরোধীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন সিএএ সমর্থকরা। দিল্লির শাহীনবাগে মাসের পর মাস ধরে অবস্থান করে সিএএবিরোধী বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন নারীরা।