উত্তরের বাতিঘর। অক্সফোর্ড নামে খ্যাত কারমাইকেল কলেজ। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজ। ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত এ কলেজ। ১৮টি বিষয়ে অনার্স আর ১৬টিতে মাস্টার্স পড়ানো হয়। প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার অবলম্বন। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ১০৩ বছরের পথ পরিক্রমা অতিক্রম করে ১০৪ বছরে পদার্পণ করলেও পিছু ছাড়েনি সংকট। নির্মাণ হয়নি প্রয়োজন মতো অবকাঠামো। প্রায় তিন যুগ আগের মাত্র তিনটি লক্কড়ঝক্কড় বাস দিয়ে চলছে পরিবহন সেবা। এক শতক অতিক্রম হলেও নির্মাণ হয়নি পুলিশ ফাঁড়ি, যার ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সবচেয়ে চরম আকার ধারণ করেছে আবাসন সংকট। ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ৯০০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। রয়েছে শিক্ষক সংকটও। মার্কেটিং বিভাগে একজন এবং সমাজবিজ্ঞান ও ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ চলছে মাত্র দুজন করে শিক্ষক দিয়ে। আর এ শতবর্ষী কলেজটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে মাত্র একজন চিকিৎসক। এতসব সমস্যা নিয়েও উত্তরাঞ্চলে জ্ঞান বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানে মাত্র তিনটি বাস। তাও ৩২ বছরের পুরোনো। এর মধ্যে দুটি বাস ৫২ আসনের। আর অন্যটি ২৮ আসনের ছোট বাস। অপর্যাপ্ত ও লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ির কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
কলেজ সূত্র জানায়, ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে কলেজের চার পাশে অবস্থিত আবাসিক মেসগুলোয় প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী বসবাস। এছাড়া কলেজের ছাত্রাবাসগুলোয় কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী বসবাস করে। এ দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীর কোনো পরিবহনের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এর বাইরে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১২ থেকে ১৩ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত কলেজে যাওয়া-আসা করেন। বিপুলসংখ্যক এই শিক্ষার্থীর বিপরীতে তিনটি বাস নিতান্তই অপ্রতুল। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিনটি বাসের মধ্যে ৫২ আসনের দুটি ১৯৮৭ সালের ও ৩২ আসনের অপর বাসটি তারও আগের। এ তিনটি বাস সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সরকারের আমলে তিনি কলেজকে উপহার দিয়েছিলেন। এরপর এখন পর্যন্ত নতুন বাসের মুখ দেখতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। পুরোনো এ গাড়িগুলো মেরামত করে জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষার্থী পরিবহন। কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, কলেজের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র তিনটি বাস রয়েছে। তার মধ্যে একটি প্রায় বিকল হয়ে পড়ে থাকে। কর্তৃপক্ষের উচিত যত দ্রুত সম্ভব আরও বাস ক্রয় করা। কলেজে আবাসন সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার হলেও আবাসনের ব্যবস্থা আছে মাত্র ৯০৬ জনের, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ। কলেজটিতে ছেলেদের চারটি আর মেয়েদের তিনটি ছাত্রাবাস রয়েছে। মেয়েদের ছাত্রীনিবাসগুলো চালু থাকলেও ছেলেদের মাত্র দুটি হল চালু রয়েছে। ছেলেদের সিএম ছাত্রাবাসটি এরই মধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর ওসমানী ছাত্রাবাসটি কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, জিএল রায় ছাত্রাবাসে ১৪৪, কেবি ছাত্রাবাসে (হিন্দু) ৫২ ও এমএজি ওসমানী ছাত্রাবাসে (বর্তমান বন্ধ) ১৮৯ সব মিলে মাত্র ৩৭৫ জন ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা আছে। যদিও সবচেয়ে বড় ছাত্রাবাসটি বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে আবাসন সুবিধার বাইরে থাকার পর ছেলেদের দুটি ছাত্রাবাস গেল বছরের ২৪ এপ্রিল চালু হয়। তবে তিনটি ছাত্রীনিবাসের মধ্যে বেগম রোকেয়ায় ১৫৬ জন, শহীদ জাহানারা ইমামে ৩৪৫ জন এবং তাপসী রাবেয়ায় ১০০Ñ সব মিলে ৬১০ জন ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা আছে।
সার্বিক বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আবাসন সংকট নিরসনের জন্য এরই মধ্যে দুটি ছাত্রাবাস (একটি ছেলেদের ও একটি মেয়েদের) নির্মাণের বাজেট পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে সে বাজেটটি হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া আমরা ছেলেদের জন্য ৫০০ আসনের ছাত্রাবাস নির্মাণে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। পরিবহন সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, কলেজে পরিবহন ব্যবস্থা দিতে হবেÑ এমন কোনো সরকারি নীতিমালা নাই। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ফান্ডে যে টাকা আছে সেগুলো থেকে বাস ক্রয়ের জন্য আমরা অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু কোনো অনুমতি পাইনি। তাছাড়া ভর্তির সময় যে টাকা নেওয়া হয়, তা ড্রাইভার-হেলপারের বেতন দিতে শেষ হয়ে যায়। শিক্ষক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা অনেক আগে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি কিন্তু সরকার তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে লিখিত অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর আমাদের পুলিশ ফাঁড়ির জন্য ঘর নির্মাণ করা রয়েছে কিন্তু প্রশাসন সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না সেখানে আমাদের কী করার আছে।