টানা ছয় টেস্ট হারের পর জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ফিরে পেলেন আত্মবিশ্বাস। অধিনায়ক মুমিনুলের হাতে একমাত্র টেস্ট জয়ের স্মারক তুলে দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন- দেশস্পোর্টস
শূন্য রানে দুই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আগের দিনই বড় জয়ের পথ তৈরি করে রেখেছিলেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। মঙ্গলবার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে স্বস্তির জয় তুলে নিতে মধ্যাহ্নভোজের পর ১ ঘণ্টা সময় নিলেন স্বাগতিক স্পিনাররা। তবে সকালে মেঘলা আবহাওয়ায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে উইকেট কিছুটা আর্দ্র হলে দুই পেসার এবাদত হোসেন ও আবু জায়েদ রাহিকে আনলেও জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানরা চোখে অন্ধকার দেখেন নাঈম-তাইজুলের স্পিনে। সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংস ১৮৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ; শক্তি-সামর্থ্যে অনেক পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় প্রত্যাশিতই। তবে দুঃসময়ের বলয়ে থাকা দলকে খানিকটা স্বস্তি দিচ্ছে এমন দাপুটে জয়।
২০০০ সালে আইসিসির পূর্ণ সদস্য হওয়ার পর খেলা ১২০ টেস্টে বাংলাদেশের জয় ১৪টি; এর অর্ধেকই আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে থাকা দলটির বিপক্ষে এবারের জয়টা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ইনিংস ব্যবধানে, প্রথমটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালে মিরপুরে। গেল দেড় বছরে সেটিই শেষ টেস্ট জয়; এরপর খেলা ৬টি টেস্টেই হার, ৫টিতে ইনিংস ব্যবধানে। অর্থনীতিতে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে কোনো দেশ একবার আবর্তিত হলে দরিদ্র থেকে ক্রমাগত দরিদ্র হয়ে ওঠে, ভঙ্গুর অর্থনীতি একটা দেশের জন্য যে সংকট উত্তরণ আদতেই কঠিন। ভঙ্গুর অবকাঠামোর না হয়েও সাদা পোশাকে গেল দেড় বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটও একই অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে, টেস্টে টানা হারে দল এতটা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছিল যে জয়ের উপায় খুঁজে বের করা যাচ্ছিল না। মুশফিকের ডাবল (২০৩*) ও অধিনায়ক মুমিনুলের (১৩২) সেঞ্চুরি এবং নাঈম হাসান (৯/১৫২) ও তাইজুলের (৬/১৬৮) ঘূর্ণিতে হারতে হারতে খাদের কিনারে যাওয়া লাল-সবুজ ক্রিকেটাররা পেল আত্মবিশ্বাস বাড়ানো জয়। আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে থাকা দলটির বিপক্ষে ঘরের মাঠে ব্যাটে-বলের নৈপুণ্যে এপ্রিলে করাচিতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগে ইনিংস ব্যবধানের জয়ে বাড়তি অনুপ্রেরণা পেয়ে গেলেন ক্রিকেটাররা। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলেও সাদা পোশাকে মুমিনুলদের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে ম্যাচটি দারুণ কার্যকর। ক্রিকেটের দর্শন মতে, প্লেয়ারদের ছন্দে ফিরতে একটি ম্যাচই যথেষ্ট। মুমিনুল-মুশফিকরা ফিরলেনও।
ইনিংস হার এড়াতে আরভিনদের দরকার ছিল ২৮৬ রান; দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই নাঈম-তাইজুলের স্পিন ঘূর্ণিতে বেসামাল আরভিনরা সাকুল্যে তুলতে পারলেন ১৮৯ রান! মঙ্গলবার চতুর্থ দিন মধ্যাহ্নভোজের পর ১ ঘণ্টার মধ্যে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন ডোমিঙ্গো-শিষ্যরা। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস ২৬৫ রানে বুকড করে মুমিনুলরা ৬ উইকেটে ৫৬০ রানের পাহাড় তুলে ইনিংস ঘোষণা করেন। তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেই ধাক্কা খান আরভিনরা, স্কোরবোর্ড শূন্য রেখে হারায় দুই টপঅর্ডার প্রিন্স মাসভাউরে (০), ডোনাল্ড টিরিপোনোকে (০)। ২ উইকেটে ৯ রান নিয়ে খেলতে নেমে বাকি ৮ উইকেট হারাল চতুর্থ দিনের এক সেশনের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও জিম্বাবুয়ের ওপর আতঙ্ক ছড়িয়েছেন অফ-স্পিনার নাঈম (৫/৮২), বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল (৪/৭৮)। তৃতীয় দিন প্রথম ওভারে পরপর দুই ডেলিভারিতে মাসভাউরে, টিরিপোনোকে ফেরত পাঠান এ অফ-স্পিনার। চতুর্থ দিনে তার প্রথম ওভারে টেলর (১৭) ফিরে গেছেন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে; তবে দিনের প্রথম শিকার কাসুজা (১০), দিনের ষষ্ঠ ওভারে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলের বলে সেকেন্ড সিøপে দিয়েছেন। লাঞ্চ ব্রেকের ৫ মিনিট আগে তাইজুলের বলে ক্যাজুয়াল রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে রানআউটে কাটা পড়েছেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক আরভিন (৪৪)। লাঞ্চের পর তাইজুলের বলে সিকান্দার রাজাকে (৩৭) মিড-উইকেটে অবিশ্বাস্য জাম্পিং ক্যাচে মুশফিকুর ফিরিয়ে দিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের আবহ এনে দিয়েছেন। চা-বিরতির ঠিক আগে তাইজুলের বলে চাকাভা (১৮) মিডঅফে তামিমের ফ্লাইং ক্যাচে বন্দি হলে বাকি কাজটা সেরেছেন নাঈম ড্রিংকসের পরে নিজের পরপর দুই ওভারে এনদিওভু (৪), মারুমাকে (৪১) ফিরিয়ে দিয়ে। টেস্ট অভিষেকে এ অফ-স্পিনার নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্টে এসেও ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেটের ছড়ালেন ঔজ্জ্বাল্য এ অফ-স্পিনার (৫/৮২)।