সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং ওভারহেড তারগুলো অপসারণ কাজ শুরু করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কারণেই এসব খুঁটি অপসারণ করবে পিডিবি। খুঁটি অপসারণের কারণে কাটা পড়বে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) ক্যাবলও। এজন্য তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
সিটির এমন ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন আইএসপি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বৈদ্যুতিক ক্যাবলের সঙ্গে ইন্টারনেট ক্যাবলগুলো ভূগর্ভস্থ করার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রকে তাদের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের পদক্ষেপ ছাড়াই সম্প্রতি গণমাধ্যমে নোটিশ দিয়ে জানিয়েছেন সিলেটে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হলে তিনি কিংবা সিটি করপোরেশন দায়দায়িত্ব নেবে না। এমন পরিস্থিতিতে সিলেটে ইন্টারনেট সেবায় বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সিলেটে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের সংগঠন সিলেট আইএসপি অ্যাসোসিশনের নেতারা বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত পিডিবির খুঁটি না সরানোর অনুরোধও জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় ৪০ থেকে ৪৫টি ইন্টারনেট কোম্পানি বিটিআরসির লাইসেন্স নিয়ে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে। তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার। বিকল্প ব্যবস্থা না করতে পারলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়বে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মেয়রের সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আমাদের নোটিশ দিয়ে জানান যে, আমরা যেন আম্বরখানা থেকে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত সব ইন্টারনেট ক্যাবল সরিয়ে ফেলি। সিলেট নগরীকে তারবিহীন করতে এ পদক্ষেপ। আমরাও চাই একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন নগরী হোক সিলেট। কিন্তু ইন্টারনেট ক্যাবল সরানোর বিকল্প কোনো পদ্ধতি না রেখেই তিনি আমাদের নোটিশ প্রদান করেন।’
তারা আরও বলেন, ‘এ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আইএসপি ব্যবসায়ীরা বারবার বৈঠক করে কোনো ফল পাননি। এমনকি বিটিসিএল এবং এনটিটিএনের সঙ্গে যৌথ বৈঠকেও এ বিষয়ে কোনো সুরাহা আসেনি। আর এনটিটিএন যেসব শর্তারোপ করছে, তাদের কথামতো ইন্টারনেট ক্যাবল ভূগর্ভস্থ করতে গেলে গ্রাহকের খরচ প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে যাবে। তাই মেয়রকে তারা স্ট্রিট ল্যাম্পের সঙ্গে ইন্টারনেট ক্যাবলের সংযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং তিনিও তাতে সম্মত হন। কিন্তু পরে এ সিদ্ধান্ত থেকেও তিনি সরে আসেন বলে দাবি করেন তারা।’
আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বর্তমানে শাহজালাল মাজার এলাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জিন্দাবাজার এলাকায় ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর প্রধান কার্যালয়। এখান থেকে পুরো নগরীতে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হয়। যখন জিন্দাবাজার এলাকার খুঁটিগুলো অপসারণ করা হবে, তখন পুরো নগরীতে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হবে। তাই হাজার হাজার গ্রাহকের কথা চিন্তা করে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত পিডিবির খুঁটিগুলো যেন সরানো না হয়।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আলম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই থেকে চৌহাট্টা পয়েন্ট এবং সিটি পয়েন্ট হয়ে সিলেট সার্কিট হাউজ পর্যন্ত, চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে রিকাবিবাজার হয়ে নবাব রোডের বিপিডিবির বাগবাড়ি অফিস এবং পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে জেলরোড পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্বে ওভারহেড বৈদ্যুতিক তারগুলো ভূগর্ভে স্থানান্তরের কাজ শেষ হয়েছে। উল্লিখিত এলাকাগুলোতে স্থাপিত সব বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং ওভারহেড তারগুলো বিপিডিবি কর্তৃক অপসারণ করা হবে। বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করার ফলে খুঁটিগুলোতে স্থাপিত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) ক্যাবলগুলোও অপসারিত হবে। ফলে ইন্টারনেট সংযোগ বিঘিœত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
‘ওই বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) এবং আইএসপির সঙ্গে কয়েক দফা সভা করে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এ ব্যাপারে আইনগতভাবে সিলেট সিটি করপোরেশনের কোনো দায়দায়িত্ব নেই বিধায় সাত কর্মদিবসের মধ্যে আইএসপিদের এনটিটিএন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো গেল। অন্যথায় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্টরা দায়ী থাকবেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন।