আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৬-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

৫০ কেজি পলিথিনে ২৫ লিটার জ্বালানি

পলিথিন কিনছে নাসিক

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
| শেষ পাতা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় পঞ্চবটি জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্রে সোমবার প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে ডিজেল এবং পেট্রল উৎপাদন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী- আলোকিত বাংলাদেশ

নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলিতে প্লাস্টিক এবং পলিথিনের বর্জ্য এখন পরিণত হতে চলেছে সম্পদে। যে-কেউ এগুলো এখন বিক্রি করতে পারবে তা। এসব বর্জ্য দিয়ে তৈরি হবে জ্বালানি তেল ও গ্যাস। শহর পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য কিনতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)। সোমবার শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় প্লাস্টিক-পলিথিন ক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাসিকের ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক শ্যামল কুমার পাল, আলমগীর হিরন, মেগা অর্গানিক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান প্রমুখ।
ফতুল্লা থানাধীন পঞ্চবটিতে সিটি করপোরেশনের ‘জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র’ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। মেগা অর্গানিক লিমিটেড তাদের লোকজন দিয়ে এ জায়গা থেকে পলিথিন কিনবে। 
মেগা অর্গানিক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরে এখানে শুধু জৈব সার উৎপাদন করা হতো। কিন্তু ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। তেল পরিশোধন মেশিন না থাকায় এতদিন আমরা পলিথিন সংগ্রহ করতে পারিনি। এখন মেশিন আছে; তাই সংগ্রহ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে ১২ জনের কাছ থেকে প্রতি কেজি ১৫ টাকা ধরে ৮৫ কেজি পলিথিন ক্রয় করা হয়। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহের শনিবার বেলা ১১টায় ২নং রেলগেট এলাকায় পলিথিন কেনা হবে। নগরীর যে-কেউ তাদের প্লাস্টিক ও পলিথিন এখানে বিক্রি করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, পলিথিন বা প্লাস্টিক হচ্ছে হাইড্রোকার্বন। পলিথিন বর্জ্য, প্লাস্টিক, পিভিসি বা টায়ারকে মূল্যবান জ্বালানি ডিজেল এবং কালো কার্বনে রূপান্তরের মাধ্যমে পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথমে পলিথিন বর্জ্য বা প্লাস্টিক পরিচ্ছন্ন করা হয়। পরে রিঅ্যাক্টরে লোড করে চুল্লি বন্ধ করা হয়। ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ৩৫০ থেকে ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর পলিথিন বর্জ্য রূপান্তর শুরু হয় অপরিশোধিত তেল ডিজেল, পেট্রল, ফার্নেশ অয়েল ও জ্বালানি গ্যাস এবং কার্বন। 
মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন ৫০ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ২৫ লিটার তেল পাওয়া যায়। ওই তেল পরিশোধন করে ১৫ লিটার ফার্নেশ অয়েল, ৮ লিটার ডিজেল, ২ লিটার পেট্রল, ২০ কেজি কার্বন পাওয়া যায়। এছাড়াও জ্বালানি যে গ্যাস পাওয়া যায়, সেটা সংরক্ষণের মেশিন না থাকায় পলিথিন পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া ১০ ভাগ অপচয় হয়। তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমাদের কাছ থেকে উৎপাদিত তেল নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও একটি পাম্প স্টেশন তেল নিতে আগ্রহী। আমরা দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিদিন ৫০০ কেজি পলিথিন পোড়াব, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তখন পাম্পের সঙ্গে চুক্তি করে তেল বিক্রি করা হবে। এতে পাম্প কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ উভয়ে লাভবান হবে। নাসিকের ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্লাস্টিক-পলিথিন ক্রয় করার এটাই প্রথম উদ্যোগ। ধীরে ধীরে প্রতিটি ওয়ার্ডে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের সিটি করপোরেশনকে পলিথিনমুক্ত করব। 
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক শ্যামল পাল বলেন, ফতুল্লা থানাধীন পঞ্চবটি এলাকায় সিটি করপোরেশনের ‘জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র’ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। সেখানে বাজারের কাঁচা সবজির ময়লা-আবর্জনা ও বাসাবাড়ির ময়লা-অবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি হয়। আর সেই সার কারখানার দায়িত্বে রয়েছে মেঘা অর্গানিক বাংলাদেশ লিমিটেড। এরাই সার তৈরি কারখানার পাশাপাশি আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্লাস্টিক-পলিথিন থেকে তেল তৈরি করবে। তিনি বলেন, মেগা অর্গানিক লিমিটেড তাদের লোকজন দিয়ে এ জায়গা থেকে টাকা দিয়ে পলিথিন ক্রয় করবে। তাই সবার কাছে আহ্বান, যেখানে পলিথিন থাকবে সেটা সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে এখানে বিক্রি করবেন। এতে আপনি লাভবান হবেন পাশাপাশি পরিবেশের উপকার হবে।
পলিথিন বিক্রেতা স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, পলিথিনগুলো আমরাই রাস্তায় ফেলে দিতাম। কিন্তু এখন যেহেতু বিক্রি করা যাচ্ছে। এতে আমরা উপকৃত হব। তাই আমরা এখন চেষ্টা করব একটা পলিথিনও যেন রাস্তার কোথাও না পড়ে থাকে। শহর পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করব। পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় পলিথিনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল ও জরিমানা করা হয়। এমনকি বিভিন্ন কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হওয়ায় এর ব্যবহার কমছে না। তাই আমরা মানুষকে সচেতন করতে স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।