আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৬-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

শাহাদাতে একাট্টা চট্টগ্রাম বিএনপি

চসিক নির্বাচন

সাইফুদ্দিন তুহিন ও শানে আলম সজল, চট্টগ্রাম
| শেষ পাতা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর চলছিল নানা হিসাব-নিকাশ। দলের অভ্যন্তরে বৈরিতা প্রকাশ্য রূপ নেবে কিনা তা নিয়ে ছিল শঙ্কা। সেই শঙ্কা এখনও কাটেনিÑ এমনটাই মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে দলে কোনো বিভেদ নেই। বলতে গেলে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে গেছেন তার প্রতি। অর্থাৎ তাকে জেতাতে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীদের মধ্যে মরিয়া ভাব। অন্য কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রতি কোনো দ্বিধা কিংবা দুর্বলতা প্রকাশ পায়নি। দলের সবার মতে শাহাদাত হোসেন যোগ্য প্রার্থী। সোমবার রাতে ঢাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় দলের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। শাহাদাতসহ পাঁচজন মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শাহাদাত ছাড়াও ছিলেন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, পোশাক ব্যবসায়ী ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ ও নগর বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর নিয়াজ মোহাম্মদ খান এবং নগর বিএনপির মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক ডা. লুসি খান। 
দলের নেতাকর্মীরা জানান, জল্পনা-কল্পনার পর মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন পান বিএনপির নগর কমিটির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী হতে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন অনেক। প্রত্যেকের পৃথক পৃথকভাবে সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্কাইপের মাধ্যমে ডা. শাহাদাতের নাম ঘোষণা করেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মনোনয়ন-বিবেচনায় জনসম্পৃক্ততা, দল ও নেতাকর্মীদের জন্য অন্তঃপ্রাণ ভূমিকা, রাজনীতির জন্য ঝুঁকি নেওয়াÑ এসব বিষয় কাজ করেছে। ক্রান্তিকালে চট্টগ্রাম নগরীতে বিএনপিকে নেতৃত্ব দেওয়া শাহাদাতের ওপরই আস্থা রেখেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। 
মনোনয়ন পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ। এছাড়া মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে অবস্থান করা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দলের স্থায়ী কমিটির সব সদস্য এবং চট্টগ্রামের বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা আমার উপর আস্থা রেখেছেন। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি পুর্নব্যক্ত করছি। গ্রহণযোগ্য পরিবেশে ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে বিএনপির জয় অবশ্যম্ভাবী। তিনি বলেন, এখন আমাদের কাজ হবে দলের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ভোট ডাকাতি মোকাবিলার মধ্য দিয়ে মেয়র পদে বিজয়ী হয়ে গণতন্ত্রের মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে তরান্বিত করা।
প্রায় ৫৫ বছর বয়সি শাহাদাত হোসেন ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে এসে এক দশক আগে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত শাহাদাত একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসন থেকে প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে পরাজিত হন। এ সময় কারাগারে থেকেই তিনি নির্বাচনে অংশ নেন। সংসদ নির্বাচনের এক বছর পর আবারও চট্টগ্রাম নগরীতেই ভোটের মাঠে আসছেন ডা. শাহাদাত। তার মনোনয়ন পাওয়ার খবরে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে নেতাকর্মীদের অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছেন শাহাদাত। বিএনপি নেতারা বলছেন, চমকের নামে কোনো ব্যবসায়ী কিংবা নবাগতকে দলের নীতিনির্ধারকরা মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলের একজন ত্যাগি নেতাকে। তাই তার মনোনয়নে তারা খুশি। 
এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম সিটির মেয়র পদে রেজাউল করিম চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করে। প্রায় ৬৭ বছর বয়সিী রেজাউল করিম চৌধুরী এই প্রথম কোনো নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নামতে যাচ্ছেন ভোটযুদ্ধে। এর আগে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে ৪১টি ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে নিজেদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে নগর বিএনপি। আওয়ামী লীগও ৪১ জন কাউন্সিলর ও ১৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ঘোষণা করেছে।
এদিকে চসিক মেয়র পদে মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন আজ (বুধবার) চট্টগ্রাম ফিরছেন। ট্রেনযোগে দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম ফেরার কথা রয়েছে তার। ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সহকারী মারুফুল হক জানিয়েছেন, স্যার (ডা. শাহাদাত) বুধবার সকাল পৌনে ৮টায় প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রওনা দেবেন। দুপুর ২টা থেকে সোয়া ২টার মধ্যে বটতলী পুরোনো রেলস্টেশনে পৌঁছার কথা রয়েছে। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবেন। বিএনপি ও দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবারই শঙ্কা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে। তারা মনে করছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবেÑ এমন আস্থা রাখা যায়। অন্যথায় ইভিএমে ভোট হলেও গোপন কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সরকার দলীয় লোকজন তাদের প্রার্থীর পক্ষে ইচ্ছামতো ভোট দিতে বাধ্য করবে ভোটারদের। তবে এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ইভিএমে শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হবে। শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী করায় আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন ডা. শাহাদাত। চসিক নির্বাচনে লড়তে দল তার উপর আস্থা রেখেছে। আমাদের নেতৃবৃন্দের কারও মনে কেনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। তাকে জয়ী করতে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করব। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না। বর্তমান সরকার নির্বাচনের নামে যা করছে তাতে কোনো দিন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। 
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমদ বলেন, সোমবার রাতে চসিক নির্বাচনের মেয়র প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ডা. শাহাদাতের নাম চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা। বাকিদের থেকে যোগ্য মনে করায় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা ডা. শাহাদাতকে প্রার্থী মনোনয়ন করেছেন। প্রসঙ্গত, ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একইদিনে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। এবার চসিকের ভোট হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে। এ নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাছাই হবে ১ মার্চ। মনোনয়ন নিয়ে আপিল করা যাবে ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মার্চ। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ মার্চ।