আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

ফেসবুকে প্রতারণার নানা ফাঁদ

জুবায়ের আহমেদ
| সম্পাদকীয়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম ফেসবুক। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মার্ক এডুয়ার্ডো স্যাভেরিন, এন্ড্রু ম্যাককলাম, ডাস্টিন মস্কোভিটজ ও ক্রিস জিউজেসের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে ফেসবুকের। প্রথমে এটির নাম দি ফেসবুক ডটকম থাকলেও পরে শুধু ফেসবুক ডটকম করা হয়, এ নামেই এখন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ফেসবুক। ফেসবুকের উন্মাদনা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহার শুরুর পর ২০১০ সাল-পরবর্তী সময় থেকে দেশব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ফেসবুক এবং বাংলাদেশে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটিরও অধিক। 
বাংলাদেশে স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ার পর থেকেই ফেসবুক পৌঁছে গেছে দেশব্যাপী ঘরে ঘরে। ফেসবুক আইডি খোলার জন্য বয়সের কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত ব্যবহার করছে ফেসবুক, দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের পাশাপাশি ফেসবুক ব্যবহার এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করলেও শুধু ফেসবুক-ভিত্তিক বহু কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যেখানে বহু তরুণ-তরুণী কাজ করছেন, পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজেদের পণ্যের মার্কেটিং করছে, ক্রেতা তৈরি করছে। বাংলাদেশে এখন বহু ব্যবসা বিদ্যমান, যাদের ব্যবসা পুরোপুরিই ফেসবুকভিত্তিক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের জুড়ি নেই। এটির উদ্দেশ্য মূলত পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা, সর্বোপরি নিজ নিজ কাজের বাইরে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটানো হলেও বাংলাদেশে ফেসবুক এখন মৌলিক অধিকারগুলোর মতো হয়ে গেছে। ফেসবুক-ভিত্তিক কাজকর্ম ছাড়াও, খেলাধুলা, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতিসহ এমন কোনো বিষয় নেই যার চর্চা হয় না ফেসবুকে। ফেসবুক দিয়ে বহু ইতিবাচক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা গেলেও অসাধু ব্যক্তিরা ফেসবুককেও নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের মাধ্যম হিসেবে পরিণত করেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে বহু ভালো কাজ হলেও প্রতারিত হওয়ার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। 
ফেসবুকে ফেক আইডি খোলার মাধ্যমে নানা রকম প্রতারণার ফাঁদ পাতছে প্রতারকরা, যাদের মিথ্যা ও প্রতারণামূলক কথাবার্তায় আকৃষ্ট হয়ে প্রতারিত হচ্ছে বহু সহজ-সরল মানুষ, যাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীই বেশি। প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করার মাধ্যমে অর্থকড়ি হাতিয়ে নেওয়া, বিপদে পড়ার কথা বলে সাহায্য চেয়ে মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করা, চটকদার পণ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের অজ্ঞতা এবং বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পণ্য না দেওয়া কিংবা ক্রয়কৃত পণ্যের পরিবর্তে অন্য কিছু দিয়ে দেওয়া, অধিক সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা, আইডি হ্যাক করে অর্থ আদায় করা, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুজব ছড়িয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করাসহ ধর্মীয় উসকানির মাধ্যমে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করা, মিষ্টি-মধুর কথাবার্তার মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষকে দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করানোর জন্য ফাঁদ পাতে অপরাধীরা। 
পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবসহ যে কোনো ইতিবাচক কাজ করার জন্য ফেসবুকের জুড়ি নেই। সবাই এখন ফেসবুকে সক্রিয় থাকার কারণে সহজেই এবং কমমূল্যে যোগাযোগ, কথাবার্তা বলার অন্যতম মাধ্যম এখন ফেসবুক। আরও অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থাকলেও ফেসবুকের সহজলভ্যতার কারণে স্বল্পশিক্ষিত কিংবা সামান্য অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষও ফেসবুক ব্যবহার করতে পারছে; কিন্তু এর অপব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্যান্য দেশ থেকেও বেশি অপরাধজনক কর্মকাণ্ড হয় ফেসবুক দিয়ে। ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসার পসরা সাজিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণার সংখ্যাও এখানে বেশি। বহু প্রবাসীও ফেসবুক প্রেমের ফাঁদে পড়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বিভিন্ন ব্যবসার চটকদার বিজ্ঞাপন, প্রেমের ফাঁদসহ নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে অপরাধীরা, যাদের ফাঁদে পা দিলেই বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে হয়। তাই ফেসবুক ব্যবহারের সময় সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই, যে কোনো ধরনের রহস্যজনক কোনো কিছুর আভাস পেলেই পরিচিতজনদের মাধ্যমে তা যাচাই করা এবং আইনের আশ্রয় নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। হ 

শিক্ষার্থী
ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম
অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)