আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

বিশেষ শিশুর শিক্ষা

সরকারের পাশাপাশি প্রয়োজন বেসরকারি উদ্যোগ

| সম্পাদকীয়

দেশে অটিস্টিক শিশু তথা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এসব শিশুর মূলধারার সঙ্গে সংযুক্তিতে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ রয়েছে। তবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় এতদ্বিষয়ক প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকায় অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করা স্বাভাবিক। এ অবস্থায় আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে হতাশ অভিভাবকদের আশার আলো দেখাচ্ছে দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার রসুলপুর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। যেসব প্রতিবন্ধী আগে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারত না, পারত না লিখতে, চিনত না বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালাÑ তারাই এখন কথা বলতে পারে, লিখতে পারে, চেনে বর্ণমালা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও তারা এখন অনেক সচেতন হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি উল্লেখযোগ্য এবং অনুকরণীয় উদ্যোগ। জানা যায়, রসুলপুর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়টি উপজেলা শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে রসুলপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি স্থাপিত হয় ২০১৩ সালে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বা প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, তাদেরও আছে শিক্ষার অধিকার। উপযুক্ত শিক্ষা পেলে তারাও সমাজের জন্য কিছু করবেÑ এমন চেতনা নিয়েই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে পরম স্নেহ ও মমতা দিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। আমরা এই মহতী উদ্যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষক ও উদ্যোক্তাদের অভিনন্দিত করছি।  
 জানামতে, রাজধানী ঢাকায় অটিস্টিক শিশুদের জন্য প্রায় ১০০টি বিশেষ স্কুল আছে। এছাড়া এই বিশেষ শিশুদের সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে থেরাপি ও কাউন্সেলিং সেন্টার। ইদানীং বিশেষ শিশুদের চিকিৎসা ও শিক্ষায় বেসরকারি উদ্যোক্তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখানে যেমন অনেকে সেবাপ্রয়াসী মানসিকতা নিয়ে আসেন আবার কারও কারও যে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নেই তা বলা যাবে না। সবচেয়ে প্রশংসনীয় বিষয়, সরকার বিশেষ শিশুদের নিয়ে অনেক ভালো কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়নেও এগিয়ে চলেছে। এদিকে দেশে ক্রমেই বিশেষ শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। জরিপে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে শুধু অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা ১৬ লাখেরও বেশি। বিভিন্ন তথ্যে স্পষ্ট, বাংলাদেশে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় অটিজম শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বগতি। সম্প্রতি শহরভিত্তিক এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৭ সাল থেকে অটিজম সচেতনতা দিবস বাংলাদেশেও আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। পাঁচ থেকে ছয় বছরে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা অটিজম শিশুদের সার্বিক অগ্রগতির এক মাইলফলক। তবে এ নিয়ে এখনও করণীয় রয়েছে অনেক কিছু।
অটিস্টিক, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিংবা বিশেষ শিশুদের মূলধারায় নিয়ে আসা একটি চ্যালেঞ্জ। সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এসব শিশু। অথচ সবখানে তাদের জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করা স্বাভাবিক কারণেই জটিল। কিন্তু বিপুলসংখ্যক শিশুকে মূলধারার বাইরেও রাখা যাবে না। আর এসব শিশুকে জাতীয় উন্নয়ন ধারায় আনতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সেজন্য অবশ্যই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সাধারণ স্কুলগুলোয় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের ভর্তির বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বিশেষ শিশুরা যোগ্য নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে আর অভিভাবকদের হতাশা হবে দূর। হ