আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

সফলতার মূলে রয়েছে বিশ্বাস

কাজী সুলতানুল আরেফিন
| তাসাউফ

মনেপ্রাণে যদি বিশ্বাস অটল থাকে, তবে ঈমান মজবুত হয়। এ বিশ্বাস হচ্ছে আল্লাহ্তে ও নবী-রাসুলে এবং তাদের আসমানি কিতাবে। আর এই বিশ্বাসের ফলে যখন ঈমান মজবুত থাকে, তখন অন্তরে প্রশান্তি থাকে। সফলতার প্রথম শর্ত কিন্তু এই বিশ্বাস। যার আত্মবিশ্বাস নেই সে কখনও দুনিয়া কিংবা আখেরাতে সফল হতে পারবে না। অর্থাৎ সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি হচ্ছে বিশ্বাস! 

‘যারা সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আখেরাত সম্পর্কে দৃঢ়বিশ্বাস রাখে। এসব লোকই তাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে আগত হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম।’ (সূরা লুকমান : ৪ ও ৫)।
দুনিয়াবি কাজকর্মে সফল হওয়ার জন্য একটা বিশ্বাসকে পুঁজি করে আমাদের সেই কাজে নামতে হয়। মনে মনে আশা করতে থাকি যে এই কাজটা হবে। কিংবা আমি নিশ্চয়ই সফল হব। তাহলে দোদুল্যমান বিশ্বাস মনে নিয়ে আখেরাতে কী করে আমরা সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখি? প্রায়ই আমাদের মনের ভেতর নানা কিসিমের প্রশ্ন উদয় হয়! আসলেই মৃত্যুর পর কিছু থাকবে তো? নাকি সব কিছু মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে? কী পাব? কখন পাব? ইত্যাদি প্রশ্ন। একটু গভীরভাবে যদি ভাবতে থাকি তাহলে নিজেকে নিজে এ প্রশ্নটা করতে পারি যে, ‘এই আমার অস্তিত্ব কীভাবে একেবারে বিলীন হতে পারে? যে আমি কি না এভাবে দুনিয়ায় নিজের অস্তিত্ব নিয়ে রাজত্ব করেছি! শুধু তাই নয়, আমাদের জন্য দুনিয়ায় যত সৃষ্টি রয়েছে তা দেখেও আমরা গভীর চিন্তায় মগ্ন হতে পারি! অথচ এত নিদর্শন দেখার পরও অবিশ্বাসী মানুষের দলও অনেক ভারি! দিন দিন তাদের দলের পাল্লা ভারি হচ্ছে।  
‘তারা কি তাদের মনে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথরূপে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য; কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতে অবিশ্বাসী।’ (সূরা রূম : ৮)।
আসলে আমাদের দুর্বল ঈমান আর অমনোযোগী ইবাদতের পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে এই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলা। শুধু মৃত্যুর পরের জীবনের ওপরও যদি বিশ্বাসের স্তম্ভ খুব মজবুত হতো তবে মানুষ অনেক অপরাধ থেকে পিছপা হয়ে যেত! সমাজে অনেক শান্তি বিরাজমান থাকত! মানুষের ওপর জোর করে এবাদত চাপিয়ে দিলে তা কোনো ফল বয়ে আনে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের ভেতরটাকে পরিষ্কার করা না হচ্ছে এবং মানুষের অন্তরে ঈমান না আসছে, বিশ্বাস মজবুত না হচ্ছে! দেশের বেশিরভাগ ক্ষমতাশালী, ধনী, প্রভাবশালী মানুষ, যারা বাবা-মার দেওয়া আরবি শব্দ বিশিষ্ট নাম নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু তাদের কথা-কাজেকর্মে-জীবনযাত্রায় ইসলামের ছিটেফোঁটাও নেই। আর এই অবস্থার একমাত্র কারণ হচ্ছে অবিশ্বাস বা বিশ্বাসের অভাব! এমনিভাবে অবিশ্বাসীদের ওপর থেকে আল্লাহর রহমত একদিন সরে যেতে থাকে। 
‘(তোমরা যাই বলো না কেন) আমাদের অন্তর একদম সুরক্ষিত, কিছুই ঢুকবে না।’ কিসের সুরক্ষিত? বরং আল্লাহ ওদেরকে ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করেছেন ওদের অবিশ্বাসের জন্য। ওদের বিশ্বাস একেবারেই নগণ্য পর্যায়ের।’ (সূরা বাকারা : ৮৮)। 
পাশাপাশি এটাও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, জন্ম-মৃত্যুসহ আমাদের জীবনের সব আয়-রোজগার তথা রিজিকও এই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা হয়। আমরা যতই রিজিকের পেছনে ছোটাছুটি করি না কেন! আল্লাহ যদি রিজিক না দেন তবে তা বাড়ানো আমাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা কী দেখে না যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিজিক বর্ধিত করেন এবং হ্রাস করেন। নিশ্চয়ই এতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে’। (সূরা রূম ৩০:৩৭)।
সংক্ষিপ্ত এ জীবনের একদিন আচমকা পরিসমাপ্তি ঘটবে। হরহামেশাই আমাদের অনেক আপনজন দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছেন। আসুন অন্তরের বিশ্বাস মজবুত করি এবং মৃত্যুর পর জান্নাত লাভের রাস্তা সুগম করি। ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে।’ (সূরা রূম : ১৫)।