আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

খুলনার কয়রায় মৎস্য চাষ বন্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ শত শত মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা
| শেষ পাতা

খুলনা মহানগরী থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে কয়রা নদীর পূর্ব-দক্ষিণ পাড়ে নয়নাভিরাম সুন্দরবন, পশ্চিমপাড়ে তেঁতুলতলা গ্রাম। এ গ্রামে যতদূর দৃষ্টি যায় দেখা মিলবে মাঠের পর মাঠ (ফাঁকা বিল) ছোট ছোট বেড়িবাঁধে ঘেরা মাছ চাষের দৃশ্য। মাঝে মাঝে ইট ও পিচের সরু সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে জনবসতি। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর একমাত্র জীবন-জীবিকা মৎস্য চাষ। কিন্তু সম্প্রতি কিছু স্বার্থন্বেষী মহল ১৫ হাজার বিঘা জমিতে মাছ চাষ বন্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্র সফল হলে শত শত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, খুলনার কয়রা উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন মহেশ্বরীপুর। যার দক্ষিণে অবস্থিত ৬ নম্বর তেঁতুলতলা ওয়ার্ড। এখানে বসবাস করেন অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। লবণযুক্ত এলাকায় বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় জীবিকার তাগিদে এসব মানুষ ১৯৯০ সালে তেঁতুলতলা মৌজায় গণ মৎস্য ঘের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এ ঘের ব্যবসা চলে। এসব ঘেরে বাগদা চিংড়ি, ভেটকি, পায়রা ও তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদিত হয়, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। তবে নানা কারণে ১৯৯৮ সালের পর থেকে গণঘের ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়। কৃষকরা নিজেরাই জমিতে নিজ নিজ উদ্যোগে ঘের ব্যবসা শুরু করেন।

জমির মালিক আবদুল গণি মোড়ল, জিএম রফিকুল ইসলাম, মো. ইছাক আলী, আয়নুল গাজী, ওহাব, ওজিয়ার গাজীসহ এলাকাবাসী জানান, ২০০৩ সালে বর্তমান মহেশ্বরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদার বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে হাঁড়িতে (ভাড়া) জমি নিয়ে তেঁতুলতলার চরে ঘের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু ঠিকমতো হাঁড়ি না পাওয়ায় জমির মালিকরা জমি দিতে চাচ্ছেন না। তারা নিজেরাই বাঁধ দিয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে ঘের ব্যবসা শুরু করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদার হাইকোর্টে রিট ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিলসহ জমির মালিকদের হয়রানি করছেন। সম্প্রতি হাইকোর্টে রিট পিটিশন খারিজ হয়ে গেলে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তিনি মাইকিং করে সøুইস গেট বন্ধের ঘোষণা দেন, যা এলাকাবাসী প্রতিহত করে। তারা বলেন, পুরো এলাকায় লবণাক্ত জমি। ফলে ধান বা কোনো সবজি এখানে ভালো উৎপাদন হয় না। একমাত্র মৎস্য চাষ লাভজনক। তাই মাছ চাষ বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া খুলনার কয়রায়

বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এ ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান তারা। 
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদার বলেন, তিনি নিজেই তার ১৫০ বিঘা জমিতে ধান চাষে সফলতা পেয়েছেন। তাই স্থানীয় কৃষকরা এখন নিজ নিজ জমিতে ধান চাষ করতে চান। লবণ পানির মধ্যে নিজের জমি ঘিরে রেখে ধান চাষ করা কঠিন। তাই অধিকাংশ কৃষক ধান চাষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সাধারণ কৃষকরাই এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি নিজে এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। এ ব্যাপারে স্থানীয় (কয়রা-পাইকগাছা) সংসদ সদস্য মো. আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, বিষয়টি তার কানে এসেছে। তবে উভয় পক্ষের কাছে শুনে এর সুষ্ঠু সমাধান করবেন।