আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

নেপথ্যে শিক্ষক পরিষদ ও ক্লাবের কর্তৃত্ব

বরিশাল বিএম কলেজে শিক্ষক অসন্তোষ

খান রফিক, বরিশাল
| নগর মহানগর

বরিশাল বিএম কলেজের নেতৃত্ব নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর প্রধান কারণ শিক্ষক পরিষদ ও শিক্ষক ক্লাবের কর্তৃত্ব। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকদের এ প্রধান দুটি সংগঠন অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে। যার প্রভাব পড়ছে কলেজের শিক্ষা, প্রশাসনিকসহ আবাসন ব্যবস্থায়ও। এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সরকারি বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক করা হয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল-আমিন সরোয়ারকে। ওই কমিটির মেয়াদ ছিল এক বছর। গেল বছরের ডিসেম্বরে ওই মেয়াদ শেষ হলেও এখনও নতুন কোনো কমিটি হয়নি শিক্ষক পরিষদের। একই অবস্থা কলেজের শিক্ষক ক্লাবের। এখানেও কলেজ অধ্যক্ষ অফিস আদেশের মাধ্যমে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করেন। এ কমিটির মেয়াদ গেল ডিসেম্বরে শেষ হয়। তবে তিনি গেল ডিসেম্বরে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করায় পদটি শূন্য হয়ে যায়। কলেজের ইতিহাসে শিক্ষক পরিষদ ও ক্লাবের কমিটি এই প্রথম অফিস আদেশের মাধ্যমে এবং সহকারী অধ্যাপকদের সম্পাদক করে গঠন করা হয়। অফিস আদেশের মাধ্যমে কমিটি গঠনের শুরুতেই কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা এর বিরোধিতা করলে পদ বাগিয়ে নেওয়া শিক্ষকদের অনুসারী কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা তাদের লাঞ্ছিত করেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গেল নভেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে আবার কলেজ অধ্যক্ষের কাছে কলেজের জ্যেষ্ঠ শতাধিক শিক্ষক গেলে তাদের ফের লাঞ্ছিত হতে হয় শিক্ষক পরিষদ, শিক্ষক ক্লাবের সম্পাদক ও তাদের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে। কলেজ অধ্যক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটলেও তিনি ছিলেন নীরব ভূমিকায়। ফলে শিক্ষকদের বড় অংশের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক ক্লাবের সাবেক সম্পাদক সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, বিএম কলেজে এর আগে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোট ব্যতীত শিক্ষক পরিষদ ও শিক্ষক ক্লাবের কমিটি গঠন হয়নি। একইসঙ্গে কোনো কমিটিতেই সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত শিক্ষক ব্যতীত কোনো শিক্ষক স্থান পাননি। তবে ২০১৯ সালে অফিস আদেশের মাধ্যমে গঠন করা বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদ শিক্ষক ও ক্লাবের কমিটি গঠন এক কলঙ্কিত অধ্যায়। কিছু ছাত্রলীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় কলেজের কয়েকজন সহকারী অধ্যাপক শিক্ষক পরিষদ ও ক্লাবের সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এক বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ গেল ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেছে। গেল নভেম্বরে কলেজের শতাধিক শিক্ষক কলেজ অধ্যক্ষের কাছে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার আবেদন নিয়ে গেলেও লাঞ্ছিত হতে হয় ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে। কলেজ অধ্যক্ষের সামনে এ রকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এসব কারণে শিক্ষকদের বৃহৎ অংশে অসন্তোষ বিরাজ করছে।  কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক ক্লাবের সাবেক সম্পাদক গোলাম মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক পরিষদ ও শিক্ষক ক্লাবের কমিটির কারণে কলেজের একাডেমিক ব্যবস্থা, প্রশাসনিক অবস্থা এবং ছাত্রাবাসগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাস, মহাত্মা অশ্বিনীকুমার ছাত্রাবাস, ফ্লাইট সার্জন ফজলুল হক ছাত্রাবাস এবং জীবনানন্দ দাশ ছাত্রাবাস এখন শিক্ষক ক্লাব ও পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করে। ওই ছাত্রাবাসগুলোতে শিক্ষক নেতারা সুপার হিসেবে বসে আছেন। তাই ছাত্রাবাসগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো সিট পান না। এসব কারণে কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন সরোয়ার বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন। তিনি নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করেননি। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে তিনি নতুন কমিটি করবেন। আর ছাত্রলীগ নেতাদের ছাত্রাবাসে সিট দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই হোস্টেল সুপাররা শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে আসন দিচ্ছেন।