আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

হাসছে স্ট্রবেরি শীতলক্ষ্যার তীরে

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
| শেষ পাতা

গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার বুক চিরে বহমান শীতলক্ষ্যার তীরে জেগে ওঠা চরে লাল টকটকে রঙ্গের সুগন্ধিযুক্ত টক ও মিষ্টি স্বাদের বিদেশি স্ট্রবেরির ফলন হয়েছে। শীতপ্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও প্রান্তিক কৃষকের কল্যাণে এখন বাংলাদেশেও সবার মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বাজার চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিনিয়ত গাজীপুরের কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ।

কৃষিকাজে সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় স্ট্রবেরি ফলের রস, জ্যাম, আইসক্রিম, মিল্ক শেকসহ শিল্পায়িত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ১৭৪০ সালে ফ্রান্সে প্রথম স্ট্রবেরির চাষ শুরু হয়। ১৭৪০ সালে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্ট্রবেরির চাষ করা হয়। পরবর্তীতে চিলি, আর্জেন্টিনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে স্ট্রবেরি। শীতপ্রধান দেশে স্ট্রবেরি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে সেসব এলাকায় স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে। অনেকে শখবশত বা বাসাবাড়ির টবে বা ছাদ চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেছেন কাপাসিয়ার কয়েকজন কৃষক।

গাজীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের একটি গ্রাম কুড়িয়াদী। এ গ্রামের কয়েকজন কৃষক নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে শীতকালীন ফসলের চাষ করলেও বছরের অন্যান্য সময় ওই জমি পতিত থাকে। কৃষিকাজে ভিন্নতা আনতে চলতি মৌসুমে পাশের শ্রীপুর উপজেলার মৌমিতা ফ্লাওয়ার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেনের পরামর্শে গ্রামের কয়েকজন কৃষক স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেন, তাদেরই একজন তোফায়েল আহমেদ বিদ্যুৎ। তিনি জানান, বর্র্ষায় জমিগুলো পানিতে ডুবে যায় এবং বর্ষা শেষে নদীর পানি নেমে যায়। এতে পলিমাটি জমে কৃষিজমিগুলো বেশ উর্বর হয়ে থাকে। এতে যে কোনো ফসলের চাষ করা হলেই সফলতা অনেকটা সফল হওয়া যায়। তিনি দেলোয়ারের মালিকানাধীন মৌমিতা ফ্লাওয়ারস থেকে এক হাজার স্ট্রবেরির চারা কেনেন, প্রতিটি চারার দাম ছিল ৩০ টাকা করে। কয়েক মাস পরিচর্যা করার পর এখন ফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি তিনি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি করে বিক্রি করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। তার পাশাপাশি নদীর চরে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন একই এলাকার আবদুর রাজ্জাক প্রধান কাজি। তিনি রোপণ করেছেন ৭ হাজার স্ট্রবেরির চারা। এছাড়াও হুমায়ুন কবির জাপানি নামের এক যুবক রোপণ করেছেন ১৩ হাজার স্ট্রবেরির চারা। কাপাসিয়ার কুড়িয়াদী গ্রামের স্ট্রবেরি চাষি হুমায়ুন কবিরহাসছে স্ট্রবেরি

জাপানি জানান, অনেকেই অনেকভাবে টাকা-পয়সা নষ্ট করে থাকেন। গেল মৌসুমের পেঁপের বাগান শীলাবৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় অনেক লোকসানের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাই এবার কয়েকজন মিলে একটি ঝুঁকি নিয়েছিলাম স্ট্রবেরি চাষের মাধ্যমে। নদীর তীরের পতিত চরে আমরা স্ট্রবেরি চাষে ভালো ফলন পেয়েছি। এখন তাদের দেখাদেখি আগামী মৌসুমে অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের আশা লাভজনক চাষ বিধায় নদীর তীরে সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে আগামীতে।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মাহবুব আলম জানান, স্ট্রবেরিতে উচ্চমাত্রার পুষ্টিমান বিদ্যমান। এ ফল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগমুক্তিতেও সহায়তা করে। গাজীপুরে বিক্ষিপ্তভাবে স্ট্রবেরির চাষ হলেও এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেননি। অনেকে শখের বশে বাসাবাড়িতে স্ট্রবেরির চাষ করলেও এখন কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ করছেন। এ চাষ লাভজনক বিধায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।