আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

২৯২ কোটি টাকার আড়িয়াল খাঁ ভাঙন রোধ প্রকল্প

নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্ন তীরবাসীর

বি কে সিকদার সজল, ফরিদপুর
| দেশ

ফরিদপুরের সদরপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন রোধে তীর সংরক্ষণে ব্লক নির্মাণকাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা ষ আলোকিত বাংলাদেশ

ফরিদপুরের সদরপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন রোধে শুরু হয়েছে নদীতীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিংয়ের কাজ। এ কাজ সম্পন্ন হলে নদীর ভাঙন রোধ সম্ভব হবে। এতে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি রক্ষার পাশাপাশি নিরাপত্তা পাবে বসতবাড়ি ও সড়ক। তীর সংরক্ষণ বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছেন ভাঙনকবলিতরা। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে আড়িয়াল খাঁ নদের তীর সংরক্ষণের এ কাজ শুরু হয়। ২৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি গ্রুপে বিভক্ত এ কাজের মধ্যে ৫.৩৮ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ ও ৬.৩ কিলোমিটার নদীর ড্রেজিং কাজ করা হবে। ২০২১ সালের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা চরাঞ্চলের কৃষক হবি খাঁ বলেন, জন্মের পর থেকেই আমরা আড়িয়াল খাঁর ভাঙনের শিকার। চারবারের ভাঙনে জায়গা পরিবর্তন করে বর্তমান স্থানে বসত গড়েছি। এখন নদীর তীর বাঁধার কাজটি ভালোভাবে শেষ হলে আমরা পরিবার নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারব। নূরুল আলম নামে আরেক কৃষক বলেন, ৫০ বছর ধরে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন দেখেছি। এখন তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হওয়ায় নতুন করে বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছি। সরেজমিন দেখা গেছে, আড়িয়াল খাঁ নদের বলাশিয়া থেকে তীর সংরক্ষণে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এখানে নদীর তীরে ড্রেজিং চলছে। পাশাপাশি চলছে ব্লক তৈরির কাজ। ড্রেজিং শেষে নদীর তীরে এসব ব্লক প্রতিস্থাপন করে পাড় বাঁধাই করে দেওয়া হবে। এ কাজের ১ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন জানান, গেল বছর নভেম্বরে কার্যাদেশ পেয়ে তারা ড্রেজিং ও ব্লক তৈরির কাজ শুরু করেন। এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। ব্লক তৈরি হয়ে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, বাঁধের নির্মাণকাজে কিছুটা অনিয়ম রয়েছে। অনিয়মগুলো তদন্ত করার দাবি জানান তারা। ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর সদরপুর এবং চরভদ্রাসনে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া ছিল আমার প্রধান অঙ্গীকার। তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নিয়ে সরেজমিন ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর করা হলে জনগুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার পাশাপাশি আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরে আসবে। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, জেলার তিনটি বড় নদীর মধ্যে আড়িয়াল খাঁ একটি। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার মানুষ আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনের শিকার হচ্ছেন। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হতো। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এসব ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে। কাজের মান যাতে ভালো হয়, সেজন্য নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট মেয়াদেই কাজটি সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।