আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৭-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

রোজা পালনে আত্মায় নুর আসে

ফিরোজ আহমাদ
| আলোকিত বিশ্ব

মানুষের মনের ভেতরে ভালো-মন্দ লুকিয়ে থাকে। মনের ভেতরে থাকা ভালো-মন্দ একে অপরের সঙ্গে সব সময় যুদ্ধ করতে থাকে। এছাড়া দুনিয়ার মোহমায়ায় আচ্ছন্ন লোভী আত্মাগুলো ভালোকে দমন করার চেষ্টায় সর্বদা সক্রিয় থাকে। আর মানুষের মন অধিকাংশ সময় মন্দ কাজের দিকেই ঝুঁকে থাকে। যার ফলে এত ইবাদত-বন্দেগি করার পরও মানুষ স্রষ্টার নুর দর্শন করা থেকে বঞ্চিত হয়। রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ তার নিজের ভেতরের মন্দকে পরাজিত করে। মানুষের ভেতরের মন্দকে পরাজিত করার শক্তিশালী কৌশল হিসেবে আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে সব নবী-রাসুলের উম্মতের ওপর রোজা ফরজ করেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছে;  যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)। 
হজরত আদম (আ.) আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। যাকে আইয়্যামে বিজের রোজা বলা হয়। হজরত নুহ (আ.)  সর্বদাই রোজা রাখতেন। হজরত দাউদ (আ.) এর উম্মতের ওপর একদিন পর একদিন রোজা ফরজ ছিল। হজরত মুসা  (আ.) এর উম্মতের ওপর আশুরার দিন এবং সপ্তাহের শনিবার রোজা ফরজ ছিল। হজরত ঈসা (আ.) এর উম্মতের ওপর একদিন রোজা রেখে, দু-দিন বিরতি দিয়ে ফের রোজা রাখার বিধান ছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদার খাতিরে একনাগাড়ে ৩০ দিন রোজা পালনের বিধান ফরজ করা হয়েছে। 
রোজার মাসেই আসমানি কিতাবগুলো নাজিল হয়েছে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর ওপর প্রথম রোজায় সহিফা নাজিল হয়েছে। হজরত মুসা (আ.) এর ওপর ১৩ রোজায় তাওরাত কিতাব নাজিল হয়েছে। হজরত দাউদ (আ.) এর ওপর ১২ রোজায় যবুর কিতাব নাজিল হয়েছে। হজরত ঈসা (আ.) এর ওপর ২৭ রোজায় ইঞ্জিল কিতাব নাজিল হয়েছে। হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর ওপর ২৭ রোজায় লাইলাতুল কদরের রাতে কোরআন শরিফ নাজিল হয়েছে।  
তাওরাত কিতাবে রোজাকে হাত্ব বলা হয়েছে। হাত্ব শব্দের অর্থ গোনাহ নষ্ট হয়ে যাওয়া। ইঞ্জিল  কিতাবে রোজাকে ত্বাব বলা হয়েছে। ত্বাব শব্দের অর্থ পবিত্র হওয়া। যবুর কিতাবে রোজাকে কোরবাত বলা হয়েছে। কোরবাত শব্দের অর্থ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। কোরআন মজিদে রোজাকে সিয়াম বলা হয়েছে। যার অর্থ আত্মশুদ্ধি লাভ করা।
রোজা মানব আত্মার সব গোনাহ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। রোজার রহমত, বরকত ও মাগফিরাত মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যে একে (নফস) বিশুদ্ধ করেছে সে সফলকাম হয়েছে এবং যে একে কলুষিত করেছে সেই অকৃতকার্য হয়েছে।’ (সূরা শামস : ৯-১০)। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার উত্তম কর্মই হলো রোজা পালন করা। যে মানুষ রোজা পালন করে। তার আত্মা বিশুদ্ধ হয়ে যায়। পরিশুদ্ধ আত্মার মানুষগুলো দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতে সফলকাম। সব ধরনের মন্দ কাজ থেকে বিরত বা সংযত থাকার নামই হলো রোজা। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তবে যে সংযত ও সংশোধিত হয় পরে তাদের জন্য ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।’ (সূরা আরাফ : ৩৫)।  
মানবদেহের ভেতরে দশটি লতিফা রয়েছে। যেমনÑ লতিফা নফস, কালব, রুহ, সির, খফি, আখফা, খাক, বাত, আব ও আতশ। রোজা পালনের ফলে মানবদেহে থাকা লতিফাগুলো পরিশুদ্ধ হয়ে আল্লাহর নৈকট্যলাভের জন্য জান্নাতের দিকে ধাবিত হয়। রোজার মাসে আল্লাহ তায়ালা আমাদের এমন একটি রজনি উপহার দিয়েছেন, এ রজনির ইবাদতের মর্যাদা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রজনিকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, রমজান মাস আগমনের সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শিকলবদ্ধ করা হয়। (মুসলিম শরিফ, খ. ২, পৃষ্ঠা ৭৫৮)। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো সৎ কাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য কামনা করে, সে যেন অন্য মাসে কোনো ফরজ কাজ আদায় করার মতো কাজ করল আর যে ব্যক্তি কোনো ফরজ কাজ আদায় করে সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব পেল।’ (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান, খ. ৫, পৃষ্ঠা ২২৩)। 
রোজা পালন করলে শুধু সওয়াবই হয় না। রোজা মানব আত্মায় ঝরনার মতো নুর প্রবাহিত হয়। রোজা পালনে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায়। রোজা মানব আত্মার তেজ-শক্তি বৃদ্ধি করে। আল্লাহ তায়ালা রোজায় সবার আত্মায় নুর দান করুন। আমিন।