আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৭-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

স্বাগতম মাহে রমজান

সংযম ও আত্মশুদ্ধির বার্তাবহ

| সম্পাদকীয়

বছর ঘুরে আবারও ফিরে এলো মাহে রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-সবল সব মুসলমান পুরুষ-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ বা বাধ্যতামূলক করেছেন। পুণ্যময় এ মাস রহমত, বরকত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে। রমজান মানুষকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। অর্থাৎ শুধু পানাহার থেকে দিনের বেলায় বিরত থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজের এবং অন্যের ওপর জুলুম করা, অপচয় করা থেকে বিরত থাকা সিয়াম সাধনার অন্যতম প্রধান দাবি। পরিতাপের বিষয়, পবিত্র রমজানের এ দাবির ব্যাপারে আমাদের সমাজে অনেকেই বেখেয়াল। প্রতি বছরই পৃথিবীর অনেক দেশে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম হ্রাস পায় রোজাদারদের সুবিধার্থে; কিন্তু বাংলাদেশে ঘটে উল্টো। রমজান মাস এলে দেশে জিনিসপত্রের দাম হু-হু করে বেড়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, এ বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। অথচ প্রধানমন্ত্রী রমজানে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি। বাণিজ্যমন্ত্রীও আশ্বস্ত করেছিলেন রমজান মাসকে ঘিরে পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।
রমজানে স্বাভাবিকভাবেই রোজাদাররা সাহরি ও ইফতারিতে আলাদা কিছু খাবার খেয়ে থাকেন। এ সময় বিশেষ কয়েকটি খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সুযোগটি কাজে লাগান একশ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। তারা খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান তাদের কাছে হয়ে দাঁড়ায় অতিরিক্ত মুনাফার মাস। পণ্যমূল্য বাড়লে সে ব্যয় মেটাতে গিয়ে কষ্টে পড়ে সাধারণ মানুষ। উল্লেখ্য, রমজানে ইফতারিতে যেসব খাদ্য বেশি ব্যবহার হয়, সেগুলোর উৎপাদন, আমদানি, মজুতকরণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চলমান। অসাধু শিল্পপতি, উৎপাদনকারী, কৃষক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, মজুতদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা অধিক মুনাফার লোভে এসব খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভেজাল মিশ্রণ করে থাকেন, যা মানুষের গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁঁকি বাড়ায়। তাই জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় উৎপাদন পর্যায় থেকে বাজারজাতসহ খাদ্য গ্রহণ পর্যন্ত খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে জোর কার্যক্রম পরিচালনা করা আবশ্যক। 
মোটকথা, রমজানে কোনো ধরনের খাদ্য নৈরাজ্য, দামের স্বেচ্ছাচারিতা ও ভেজাল দেখতে চান না মানুষ। অন্যদিকে সিয়াম সাধনার এ মাসে সামর্থ্যবান ও বিত্তশালী অনেকেই অপচয় করেন। খাওয়া-দাওয়ায় বেশি বেশি খরচ না করে পবিত্র এ মাসে মানবতার সেবায় ব্যয় করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হয়। এটাই রমজানের শিক্ষা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবার রোজায় দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নাগরিক জীবনের সমস্যাগুলো সহনীয় পর্যায়ে থাকবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা সবার। হ