সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান আবার হাজির বছর ঘুরে। পুরো একটি মাস তাই ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি খাবার-দাবারের দিকে রাখতে হয় বিশেষ নজর। কারণ রমজানে দিনের বেলা আপনাকে থাকতে হয় খাবার গ্রহণ ছাড়াই; তাই ইফতারে খাবার গ্রহণে থাকতে হবে একটু সতর্ক। অধিক খাবার গ্রহণ বা তৈলাক্ত খাবারে হতে পারে গুরুপাক। তবে অল্প কিছু জিনিস মাথায় রাখলেই মিলছে সমাধান; না হলে বেঁকে বসতে পারে আপনার পরিপাকতন্ত্র, শরীর। বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত পেটের গোলযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে নিরবচ্ছিন্ন সিয়াম সাধনার মাসটিতে আপনার ইবাদত-বন্দেগিতেও।
ইফতার ও সাহরির সময় কিছু অতি চেনা খাবার-দাবারের নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যকর উপায়ে গ্রহণের জন্য নিচে দেওয়া হলো তার কিছু খুঁটিনাটি টোটকা :
শরবত : লম্বা দিনের রোজা, তার ওপর এ হাঁসফাঁস গরমে ইফতারে পানীয় শরবত ছাড়া তো কিছু ভাবাই যায় না। শরবত পান করবেন তো অবশ্যই; কিন্তু চিনির পরিমাণ যতটা কম পারা যায় ব্যবহার করাই উত্তম। কারণ সারাদিনের খালি পেটে চিনিযুক্ত শরবত গ্যাস সৃষ্টি করার বড় নিয়ামক হতে পারে। খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করে একটু সময় নিয়ে শরবত পান করা উচিত। অনেকে আবার একই সঙ্গে দুই-তিন গ্লাস শরবত পান করেন, যা পাকস্থলীর জন্য খুবই ক্ষতিকর এমনকি খাদ্যনালির জন্যও। সাধারণত চিনি থেকে গাঁজন হয়ে গ্যাসটা তৈরি হয়; তাই শরবত এক গ্লাস পান করাই ভালো।
দই-চিড়া-কলা : দই-চিড়া-কলা হতে পারে উৎকৃষ্ট এক উপাদেয় ইফতার। দই চিড়া কলা আপনার সারাদিন শেষে খালি পেটের জন্য এক আরাম নিয়ে আসবে, বদহজম, গ্যাস ও বিভিন্ন সমস্যা থেকে দেবে মুক্তি। মনে রাখা দরকার, দই হজম শক্তি হিসেবে অতুলনীয়।
খিচুড়ি, ছোলা, সালাদ : ইফতারে অনেকেই খিচুড়ি রাখতে পছন্দ করেন, পাশাপাশি ছোলাভুনা তো লাগেই আমাদের। কিন্তু ছোলাভুনা না করে আলাদা করে পেঁয়াজ, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, আদাকুচি দিয়ে যদি মাখিয়ে খাওয়া যায়, সেটা অনেক স্বাস্থ্যসম্মত মশলাদার থেকে। অনেকের ইফতারে পেঁয়াজু-বেগুনি থাকা চাই-ই চাই। পছন্দের জিনিসগুলোর স্বাদ আপনি নিতে পারেন; তবে দুই-তিনটির বেশি না নেওয়াই উচিত। এসব ভাজাপোড়ার সঙ্গে অবশ্যই বেশি পরিমাণে সালাদ রাখতে একদম ভুলবেন না। ছোলা, পেঁয়াজু, হালিম কখনও একসঙ্গে খাবেন না। এতে প্রচুর প্রোটিন কিডনির জন্য খুব খারাপ ফল ভয়ে আনবে।
ফলমূল : ইফতারে সিজনাল ফল রাখা বেশ ভালো; তবে একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খাওয়ার ক্ষেত্রে সাত দিনে তা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। যাতে একেক দিন একেক ধরনের ফল টেবিলে থাকে। ইফতারে অনেক কিছু একসঙ্গে না খেয়ে সাহরি পর্যন্ত তিনটা মিলে ভাগ করে নেওয়া যায়। যেমনÑ
ইফতারের দুই ঘণ্টা পর স্যুপ খেতে পারেন, বাদাম কিংবা একটা ডিম সিদ্ধ রাখতে পারেন আপনার ডায়েট তালিকায়।
রাতের খাবার হবে হালকা কিছু। হতে পারে দুধ, ফ্রুটস জাতীয় কোনো পদ। সাহরিতে দুটি খেজুর ফিক্সড করে আপনার রেগুলার মিল নিন। যারা সাহরিতে একেবারে খান না, তারা দুটি খেজুর, একটা ডিম সিদ্ধ, আধা কাপ দই খেতে পারেন, যা সারাদিন এনার্জি সাপোর্ট দেবে আপনাকে। আর ফুল মিল যারা নেবেন রাইস-মাছ অথবা মাংসের আইটেম রাখতে পারেন। ডাল না রাখাই ভালো হবে। কারণ ডালে গ্যাস হতে পারে; তাই তা বাদ দেওয়াই উচিত। ইফতার অথবা সাহরিতে যদি লেমন রাখা যায়, তাহলে সেটা হবে শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
পানি : একই সঙ্গে খুব বেশি পানি পান না করে ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত ৭-৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে প্রতি আধঘণ্টা পরপর।
রাত ১০টার মধ্যে ৫-৬ গ্লাস পানি পান করে নিতে হবে। সাহরিতে ঘুম থেকে উঠেই পানি পান করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর খাবার খেতে পারেন। সাহরির পর একটু সময় রাখতে হবে, যাতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আরও এক গ্লাস পানি পান করা যায়।
শারীরিক ব্যায়াম : অনেকের ধারণা, রোজা রেখে ব্যায়াম করা যায় না। রোজা রেখেও চাইলে আপনি হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারেন। ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের একটা ওয়াক দিতে পারেন ওজন কমাতে।
ইফতারের ৪০ মিনিট পর ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের একটা ওয়াক আপানর ডাইজেসনে খুব সাহায্য করবে, সঙ্গে ইফতারে বেশি ক্যালরি কনজুম করলে তা পোড়াবে। মনে রাখা ভালো, ক্যালরি যত পোড়াবেন আপনি তখন আর কোনো মজাদার খাবারের পদ শুধু চেয়ে চেয়ে না দেখে একটু চেখেও দেখতে পারবেন। হ
আদিত্য শাহীদ
কলাম লেখক
পুষ্টিবিদ ও বিভিন্ন হেলথ ওয়েবসাইট অবলম্বনে