আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৭-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

মাহে রমজানে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়

মোহাম্মাদ মাকছুদ উল্লাহ
| প্রথম পাতা

পবিত্র মাহে রমজান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারণ, রমজান মাসের ইবাদতের নেকি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসকে সম্পূর্ণভাবে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন এবং মাহে রমজানে যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ইবাদতে মশগুল থাকা যায় সেজন্য তিনি রমজান মাস শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং  রমজানের সৌভাগ্য লাভের জন্য রজব ও শাবান মাস থেকে কায়মনোবাক্যে দোয়া করতেন। তিনি 

পারিবারিক ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ আগে থেকে সমাধা করতেন, যাতে রমজান মাসে সেদিকে ব্যস্ত থাকতে না হয়।
এরপর রমজান মাস শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করতেন। রাসুলে করিম (সা.) রমজান মাসে বিশেষ করে চারটি আমলের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করতেন। হজরত সালমান (রা.) বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদিসের শেষভাগে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা এ মাসে চারটি আমল বেশি বেশি করো। চারটি আমলের দুটি এমন, যা দ্বারা তোমরা তোমাদের রবকে সন্তুষ্ট করবে। আর দুটি আমল এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো উপায় নেই। যে দুটি আমল দ্বারা তোমরা তোমাদের রবকে সন্তুষ্ট করবে তা হলো- ১. কালিমা শাহাদাৎ বেশি বেশি পাঠ করা এবং ২. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা (আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা)।
আর যে দুটি আমল করা ছাড়া তোমাদের কোনো উপায় নেই তা হলো- ১. তোমরা আল্লাহর কাছে জান্নাত লাভের জন্য প্রার্থনা করবে এবং ২. আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে নাজাত চেয়ে প্রার্থনা করবে। (সহিহ ইবনে খুজাইমা, খ-: ৩, পৃষ্ঠা: ১৯১, হাদিস: ১৮৮৭, আদ-দাওয়াতুল কাবির, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ১৫১, হাদিস: ৫৩২, ফাজাইলুল আওকাত, খ-: ১, পৃষ্ঠা: ১৪৬, হাদিস: ৩৭)
উপরোক্ত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে যে চারটি আমল বেশি বেশি করতে উম্মতকে আদেশ করেছেন সেগুলো হলো, কালিমা শাহাদাৎ পাঠ করা, ইস্তেগফার করা, জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া। এগুলো ছাড়াও আরও কিছু বিশেষ আমল আছে, যেগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যেতে পারে। যেমন ১. কোরআন তেলাওয়াত। রমজান মাসে মহানবী (সা.) সব থেকে বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত এক হাদিসের বিবরণ থেকে জানা যায়, রমজানের প্রত্যেক রাতে হজরত জিবরাঈল (আ.) রাসুলুল্লাহর (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং ওই সময় পর্যন্ত পবিত্র কোরআনের যতটুকু নাযিল হয়েছিল ততটুকু রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার হজরত জিবরাঈলকে তেলাওয়াত করে শোনাতেন। একইভাবে হজরত জিবরাঈল (আ.) রাসুলুল্লাহকে (সা.) তেলাওয়াত করে শোনাতেন। (সহিহ আল-বোখারি, খ-: ১, পৃষ্ঠা: ৮, হাদিস: ৬, আস সুনানুল কুবরা, খ-: ৩, পৃষ্ঠা: ৯২, হাদিস: ২৪১৬, সুনানে নাসাঈ, খ-: ৪, পৃষ্ঠা: ১২৫, হাদিস: ২০৯৫, সহিহ ইবনে হিব্বান, খ-: ১৪, পৃষ্ঠা: ২৮৫, হাদিস: ৬৩৭, মুসনাদে আহমাদ, খ-: ৩, পৃষ্ঠা: ১৭৮, হাদিস: ২৬১৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে বেশি বেশি দান-খায়রাত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন লোকদের মধ্যে সব থেকে বেশি দানশীল। রমজান মাস এলে তার দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। বিশেষ করে হজরত জিবরাইল (আ.) যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে রমজান মাসের প্রতি রাতে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাকে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। জিবরাইল (আ.) যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তার দানশীলতা বৃষ্টি আনয়নকারী বাতাসের চেয়েও বেশি বেগবান হয়ে উঠত। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৬১৬)
বস্তুত রমজান মাস মুমিনের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সমূহ সুযোগ এনে দেয়। তাই মাসটিকে বলা হয় নেক আমলের মৌসুম। হজরত সালমান (রা.) কর্তৃক বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল আমলের দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবে সে অন্য সময়ে একটি ফজর ইবাদত করার নেকি লাভ করবে। আর যে এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত করবে সে অন্য সময়ে সত্তরটি ফরজ আদায় করার নেকি পাবে। (মুসনাদে হারেস, খ-: ১, পৃষ্ঠা: ১০১২, হাদিস: ১১৩৬, সহিহ ইবনে হিব্বান, খ-: ৩, পৃষ্ঠা: ১৯১, হাদিস: ১৮৮৭, সহিহ ইবনে খুজাইমা, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ৯১১, হাদিস: ১৮৮৮, শুআবুল ঈমান, খ-: ১, পৃষ্ঠা: ১৪৬, হাদিস: ৩৭)।
লেখক : পেশ ইমাম, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ