রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুট
নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে মানুষের প্রথম পছন্দ ট্রেন। কিন্তু রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন যাত্রাও অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এ রুটের যাত্রীদের কাছে এখন আতঙ্ক দুর্বৃত্তের ছোঁড়া পাথর। পাথরে মাঝে মাঝেই রক্তাক্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। দুর্বৃত্তদের এমন পাথর নিক্ষেপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রেল পরিষেবা।
সম্প্রতি এ রুটে নতুন চালু হওয়া বিরতিহীন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিও দুর্বৃত্তদের পাথর হামলার শিকার হয়েছে। পাথর নিক্ষেপে ট্রেনটির আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে। এছাড়া এক মাসে এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনে অন্তত ১৭টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তবে কাউকেই আটক করা যায়নি। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাথর হামলাকারীরা।
এদিকে সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যার পর সিরাজগঞ্জের জামতৈল ও মনসুর আলী স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের পাথর নিক্ষেপে গুরুতর জখম হয়েছে সালমান জাহান জিসান নামে সাড়ে চার বছরের এক শিশু। তার বাবার নাম আবদুস সালাম। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সোনাডাঙ্গা গ্রামে তাদের বাড়ি। পাথরের আঘাতে গুরুতর আহত জিসান বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার দুপুরে তাকে দেখতে যান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহীদুল ইসলাম।
জিসানের স্বজনরা জানান, বাবা আবদুস সালামসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে রাজশাহী আসছিল জিসান। সিরাজগঞ্জে দুর্বৃত্তদের একটি পাথর এসে জিসানের মাথায় আঘাত করে। এতে প্রায় এক ইঞ্চির মতো কেটে রক্তাক্ত হয় জিসান। ট্রেনে জিসানের মাথায় কাপড় বেঁধে রাখা হয়। রাত ৯টার দিকে রাজশাহী নেমেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জিএম খোন্দকার শহীদুল ইসলাম শিশু জিসানকে দেখতে হাসপাতালে যান। তিনি শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি জানান, এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটা পুরো জাতির জন্য লজ্জার। আমরা লজ্জিত। ফুটফুটে শিশুটিকে দেখেই মায়া লাগছে। তিনি জানান, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী পথে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে গেছে। ফলে ট্রেন চলাকালীন জানালা বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে দায়িত্বরতদের। পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অনিষ্টকারী দুর্বৃত্তদের শিগগিরই চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, এ পথে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি রেলের যাত্রীও বেড়েছে। তবে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা চলতে থাকলে যাত্রীরা ট্রেনবিমুখ হয়ে পড়বে। এতে সরকারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দ্রুত পাথর নিক্ষেপকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।