ইফতারির প্রথমেই শরবত খুবই উপকারী। শরবতের মধ্যে লেবু, বেল বা ইসপগুলের শরবত শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো। ইসপগুল কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র, পাকস্থলীর প্রদাহ প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। বেলের শরবতে ক্যালসিয়াম, মিনারেল ও লেবুর শরবতে ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম ও
অন্যান্য খনিজ পদার্থ রয়েছে
রমজানে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। ভোররাতে সাহরি, সন্ধ্যায় ইফতারি, রাতের খাবারÑ এই হলো রমজানের খাবার রুটিন। সারা দিন না খেয়ে তৃষ্ণার্ত থেকে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সিয়াম সাধনা করে থাকেন। তাই রমজানে সুস্থ থাকতে ইফতারিতে প্রয়োজন পড়ে সুষম খাবার তালিকা। অনেকেই মনে করেন, ইফতারিতে বেশি বেশি খেলেই সারা দিনের খাবারের ঘাটতি তথা ক্যালরি পূরণ হয়ে যায়। এটি ভুল। আসলে সুস্থ থাকতে বেশি খাওয়ার পরিবর্তে ইফতারিতে প্রয়োজন পড়ে পরিমিত ও সুষম খাবারের। আমাদের মনে রাখতে হবে, রমজানে বেশি খেলে লাভের চেয়ে শারীরিকভাবে ক্ষতিই বেশি। এক গবেষণায় জানা গেছে, খালি পেটে থাকলেই ক্ষুধার অনুভূতি হয় না। ক্ষুধার মূল কারণ পাকস্থলীতে ফ্যাট বা চর্বির উপস্থিতি। আমরা যা খাচ্ছি এর মধ্যে থেকে পাকস্থলীতে যদি চর্বির স্তর বেশি থাকে তবেই আমাদের বেশি ক্ষুধা লাগে। অন্যদিকে পাকস্থলীর খাবারের মধ্যে চর্বি কম থাকলে ক্ষুধা কম লাগে। মোটকথা, চর্বির পরিমাণের তারতম্যের ওপর ক্ষুধার অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয়। কারণ পেট খালি থাকলে দেহে ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। আমাদের খাবার থেকেই ফ্যাট বা চর্বি পাকস্থলীতে যায় এবং ফ্যাটি এসিড নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমাদের বেশি বেশি ক্ষুধা লাগে। আমরা সাধারণত রমজানে সাহরি ও ইফতারে ফ্যাটজাতীয় খাবার একটু বেশিই খাই। এ কারণে কিন্তু দিনে ক্ষুধার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এবং আমরা অসুস্থ বোধ করি। তাই সাহরি ও ইফতারিতে ফ্যাটজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। বাঙালি হিসেবে আমরা ইফতারিতে সাধারণত ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি ও হালিম খেতে বেশি ভালোবাসি। সারা দিন রোজা রেখে এসব ভাজাপোড়া খেলে অনেকেরই পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রাইটিস, পেট ফাঁপা ও বমি হতে পারে। তারপরও যুগ যুগ ধরে চলে আসা আমাদের ইফতারির ঐতিহ্য চাইলেই হুট করে পরিবর্তন করতে পারব না। আমাদের ঐতিহ্যবাহী এসব ইফতারিতেও রয়েছে প্রচুর ক্যালরির জোগান। সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারিতে এত ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি খেলে যেমন শরীরের ওজন বেড়ে যায়, তেমনি হজমেও গোলমাল হতে পারে। তাই ইফতারিতে এসব খাবার পরিমাণ মতো খাওয়াই ভালো। আসুন জেনে নিই আমাদের ঐতিহ্যবাহী ইফতারির খাবারের কিছু তথ্যÑ
ষ ইফতারির প্রথমেই আমরা সাধারণত শরবত খাই, সারা দিনের পানিশূন্যতা ও লবণের ঘাটতি মেটাতে এ শরবত খুবই উপকারী। শরবতের মধ্যে লেবু, বেল বা ইসপগুলের শরবত শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো। ইসপগুল কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র, পাকস্থলীর প্রদাহ প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। বেলের শরবতে ক্যালসিয়াম, মিনারেল ও লেবুর শরবতে ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ রয়েছে।
ষ মুড়ি বা চিঁড়ায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার জোগান।
ষ ছোলা ও মটরে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও খাদ্যশক্তি। তবে আলসারে আক্রান্তদের ছোলা বা মটর কম খাওয়াই ভালো।
ষ হালিম একটি পুষ্টিকর ও ক্যালরিযুক্ত খাবার। কারণ এতে থাকে চাল, ডাল, গম, গোশত, তেল, ঘি ও বিভিন্ন ধরনের মশলা। চাল ও গমের অ্যামাইনো এসিড এবং গোশত ও ডালের অ্যামাইনো এসিড মিথাওনিন, ট্রিপটোফ্যাল, সিসটাইলের ফলে ইফতারিতে হালিমের খাদ্যগুণ ও পুষ্টিগুণ অনেক।
ষ ডাল, বেসন ও ময়দা প্রোটিন ও শর্করার ভালো উৎস।
ষ ইফতারিতে আমরা যার যার সাধ্যমতো বিভিন্ন ফল রাখার চেষ্টা করি। ফল আমাদের দেহে ভিটামিন ও মিনারেলের জোগান নিশ্চিত করে।
২৫ গ্রাম ছোলাÑ ৯২ ক্যালরি
১টি বেগুনিÑ ৮০ ক্যালরি
২টি পেঁয়াজুÑ ১০০ ক্যালরি
১টি বড় জিলাপিÑ ২০০ ক্যালরি
২টি খেজুরÑ ১৪৫ ক্যালরি
১ কাপ মুড়িÑ ৬০ ক্যালরি
১ বাটি হালিমÑ ২০০ ক্যালরি
১টি কাবাবÑ ১৭০ ক্যালরি
২টি ফলÑ ৪০ থেকে ১০০ ক্যালরি
১ গ্লাস শরবতÑ ৬০ থেকে ৭০ ক্যালরি
তবে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এসব ইফতারি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে খাবারগুলো ভেজালমুক্ত স¦াস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি কিনা। নইলে এসব তেলযুক্ত খাবার খেয়ে উল্টো আমরা অসুস্থও হয়ে যেতে পারি। তাই সারা দিন রোজা শেষে ইফতারিতে পরিমিত খাবার খান ও সুস্থ থাকুন।
ডা. মহসীন কবির লিমন
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, লেখক ও গবেষক
ইনচার্জ, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন
বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ, ঢাকা