ঈমানের পরে একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো নামাজ আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে মেরাজে নিয়ে উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। এর মাধ্যমে নামাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। নবীজির যুগে যারা নামাজ পড়ত না তাদের ঈমানদার মনে করা হতো না। হজরত যাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী হলো নামাজ।’ (ইবনে মাজাহ : হাদিস নং ১০৭৮)।
নামাজ পড়া মানে আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সামনে নিজেকে বিলীন করা। আল্লাহর সামনে দ-ায়মান হওয়া। তাঁর সামনে মাথানত করা। তাঁর কুদরতি পায়ে সিজদা করা। সুতরাং নামাজে আল্লাহর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখা জরুরি।
নামাজ এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বেশি নৈকট্য অর্জন করে। নামাজে যখন আমরা সিজদা করি তখন আমরা আল্লাহর পরিপূর্ণ নৈকট্য লাভ করি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘বান্দা সিজদা অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বেশি নৈকট্য লাভ করে। সুতরাং তোমরা তখন বেশি বেশি দোয়া কর।’ ( মুসলিম : ৪৮২)।
একাগ্রতা কী?
নামাজের প্রাণ হলো একাগ্রতা। একাগ্রতা মানে দেহমন নামাজে উপস্থিত রাখা। দেহ প্রশান্ত রাখা। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ-হাত-পা অহেতুক নাড়াচাড়া না করা। শান্ত ও ধীরস্থিরভাবে নামাজের রুকনগুলো আদায় করা। নামাজে অন্যমনষ্ক না হওয়া। প্রতিটি রুকন আল্লাহ তায়ালার ধ্যানমগ্নতায় আদায় করা। কোরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সব নামাজের প্রতি যতœবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। (সূরা বাকারা : ২৩৮)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘মোমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে যারা নিজেদের নামাজে বিনয় ও নম্র।’ (সূরা মুমিনুন : ১-২)।
এই দুটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নামাজের রুকনগুলো আদায় করার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা বিনয় ও মুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করার তাগিদ দিয়েছেন। মোটকথা, নামাজে এমনভাবে দাঁড়ানো যে, দূর থেকে যেন মনে হয় একজন অসহায় দাস তার মহান মালিকের সামনে বিনয়, আদব ও নম্রতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে।
নামাজে একাগ্রতা না থাকলে সওয়াবও পরিপূর্ণ পাওয়া যায় না। হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষ নামাজ শেষ করে কিন্তু সে পরিপূর্ণ সওয়াব পায় না। বরং দশ ভাগের এক ভাগ, নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ বা অর্ধাংশ সওয়াবপ্রাপ্ত হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ : হাদিস নং ৭৯৪)।
এ হাদিসে নামাজের সওয়াবপ্রাপ্তির যে ব্যবধান উল্লেখ করা হয়েছে তা মূলত নামাজির একাগ্রতা ও মনোযোগিতার পার্থক্যের কারণে হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি নামাজে পূর্ণ মনোযোগী থাকে সে পরিপূর্ণ সওয়াব লাভ করে। যার মনোযোগ কম থাকে সে কম সওয়াবের অধিকারী হয়। সুতরাং আমাদের উচিত, নামাজে পরিপূর্ণরূপে একাগ্র হওয়া।
কীভাবে একাগ্রতা অর্জন হবে?
নামাজে একাগ্রতা অর্জনের জন্য সঠিক নিয়মে নিয়মিত চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত চেষ্টার মাধ্যমে তা অর্জন করা সম্ভব। নিচে এমন কিছু পদ্ধতি উল্লেখ করা হলোÑ
গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা।
হারাম খাদ্য থেকে বেঁচে থাকা।
ওজুর সময় থেকে অন্তর নামাজের দিকে ধাবিত রাখা।
আজানের সঙ্গে সঙ্গে অন্তরকে নামাজের প্রতি মনোযোগী করা।
নামাজের আগে নামাজের ফজিলতের ধ্যান করা।
নামাজ থেকে অলস করে দেয়Ñ এমন বিষয় থেকে দূরে থাকা।
গাইরুল্লাহ থেকে ধ্যানখেয়াল ছিন্ন করা।
আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছি এবং আল্লাহ আমাকে দেখছেনÑ এই চিন্তা করা।
নামাজের পরপর মৃত্যু হাজির হবে মনে করা।
তেলাওয়াতের সময় মনে করা যে, আমি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলছি।
অর্থ বুঝে বুঝে তেলাওয়াত করা।
নামাজের বিভিন্ন তাসবিহের প্রতি মনোযোগ রাখা।
নামাজের রুকনগুলো ধীরস্থিরে আদায় করা।
যারা একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ পড়ে তাঁদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা।
একাকী নামাজের জন্য মেহনত করা।