সিলেটে মানবপাচারের সঙ্গে ৮৮টি অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সি জড়িত রয়েছে বলে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সূত্র জানিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকাও আটাবের পক্ষ থেকে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের হাতে কিছুদিন আগে তুলে দেওয়া হয়। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় রয়েছে ৭৬ এবং মৌলভীবাজার জেলায় ১২টি। এদিকে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোবাইল কোর্টের অভিযানে ২০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও অর্থদ- প্রদান করা হয়।
আটাব সিলেট অঞ্চলের সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল জানান, সিলেট অঞ্চলে বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় ২০০টি ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। এর বাইরে অনুমোদনহীন ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এর মধ্যে ৮৮টি এজেন্সির তালিকা কিছুদিন আগে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি জানান, সিলেটের বিভিন্ন মার্কেটে বিপুলসংখ্যক ট্রাভেল এজেন্সি নামধারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে মানব পাচার হচ্ছে। এসব এজেন্সির নাম বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয়েও প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান যাত্রিক ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আটাবের এ নেতা। তিনি জানান, এসব এজেন্সির মধ্যে এমনও এজেন্সি রয়েছে, যেগুলো বিদেশে মানব পাচারের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।
আটাব সূত্র জানায়, একটি ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, স্টাফ লিস্ট, টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর), ৩৮০ বর্গফুট জায়গার একাগজপত্রসহ সিভিল এভিয়েশনে আবেদন করতে হয়। কাগজপত্র যথাযথ হলেও কেবল সংশ্লিষ্টদের ট্রাভেল ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আটাব সভাপতি বলেন, কেবল লাইসেন্স হলেই হবে না, আমরা নেচার অব বিজনেস এবং নেচার অব কারেকটারিস্টিকসের ওপর জোর দিচ্ছি। তিনি বলেন, মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ট্রাভেল লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও আমরা ইয়াহিয়া ট্রাভেলসকে আটাবের লাইসেন্স দেইনি। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ফেঞ্চুগঞ্জের তিন যুবকসহ বেশ কয়েকজন ইয়াহিয়া ট্রাভেলসের মাধ্যমে লিবিয়া গমন করেন বলে সংশ্লিষ্টদের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উল্লাহ খান জানান, জেলা মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার সিলেটের বিভিন্ন অনুমোদনহীন ট্রাভেল এজেন্সিতে অভিযান চালায় পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বাধীন পাঁচটি পৃথক মোবাইল টিম। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ৬ সিলেটি যুবকের প্রাণহানির ঘটনায় সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
অভিযানে অংশ নেওয়া আটাবের এক শীর্ষ নেতা জানান, অভিযানকালে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ট্রাভেল এজেন্সি আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী ২০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও অর্থদ- প্রদান করা হয়। ওই নেতা জানান, অভিযানের খবর পেয়ে অনেক অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির মালিক পালিয়ে যান। অভিযানকালে উপশহর এলাকায় ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান।