আসামি না হয়েও জাহালমের তিন বছর জেল খাটার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল শুনানির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দুদকের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ সোমবার দুদকের আবেদনের ওপর শুনানি করে এ আদেশ দেন। সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের ফলে হাইকোর্টে রুলের শুনানির ওপর চেম্বার আদালতের জারি করা স্থগিতাদেশ আর কার্যকর থাকছে না। বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ সংক্রান্ত রুলের শুনানিসহ সব কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। তিনিই বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এনেছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, ভুক্তভোগী জাহালম আগে এ মামলায় পক্ষভুক্ত ছিলেন না। তিনিও এখন পক্ষভুক্ত হয়েছেন। আপিল বিভাগে সোমবার জাহালমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এএম আমিনউদ্দিন। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক; কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।
এ বিষয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। সেটি সেদিন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত। এরপর ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করে।
কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে নাÑ তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত একটি রুলও জারি করা হয়।
এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।
পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কিনা- তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক। তবে হাইকোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন।
কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্র (সিএস)সহ সব নথি তলব করেন হাইকোর্ট।
দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলেন, ইঁদুর ধরতে না পারলে সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই। জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেনÑ তার মুখ থেকে তা শুনতে তাকে আদালতে নিয়ে আসতে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের এ বেঞ্চ। সে অনুযায়ী জাহালম ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন।
কিন্তু দুদক এক মাসেও নথি দাখিল করতে না পারায় ২ মে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ মামলার নথি ও দুদকের প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন আদালত। পাশাপাশি আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। ওইদিনই আদালত জানায়, ২ মে দুদক তাদের প্রতিবেদন দিলে তখনই হাইকোর্ট জাহালমের মুখ থেকে তার কথা শুনবে। এরপর দুদক ২১ এপ্রিল হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে যান।
দুদকের যুক্তি ছিল, হাইকোর্টে দুদকের মামলা শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ রয়েছে। যে বেঞ্চ রুল দিয়েছেন, দুদকের মামলা শোনার এখতিয়ার সেই বেঞ্চের নেই। ওই আবেদনের শুনানি করে চেম্বার আদালত রুল শুনানিসহ এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম ১৩ মে পর্যন্ত স্থগিত করে দেন। পাশাপাশি বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার দুদকের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন।