২০ দলীয় জোট ভাঙবে না, বরং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জোটের পরিসর আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। বৈঠকে ২০ দলের অনেক শীর্ষ নেতা থাকলেও বিজেপি (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ আমন্ত্রণ পেয়েও উপস্থিত ছিলেন না।
আন্দালিব রহমান পার্থের জোট ত্যাগের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তার মান-অভিমান থাকতেই পারে। আশা করি ভুল-ত্রুটি সংশোধন হলে সেটি ঠিক হয়ে যাবে; পার্থ ২০ দলে ফিরে আসবে।’ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের জোট ছাড়ার হুমকির বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ডা. ইরান আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাদের বলেছেন, এ ধরনের কথা তিনি বলেননি।’ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশের আগে সতর্ক হয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বলেন, জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এখন থেকে প্রতি মাসে ২০ দলীয় জোটের একটি বৈঠক হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘২০ দলের সম্মতি নিয়েই বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। এ বিষয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’ সভায় ধানের মূল্য কম হওয়ায় কৃষক মারাত্মক ক্ষতির শিকার হওয়ার ঘটনায় ২০ দল উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে ২০ দল। এছাড়া দেশে আইনের শাসন না থাকায় দেশে ক্রমবর্ধমান হারে নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণ, বেকারত্ব ও জ্বালানি তেলের এবং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারার বিরুদ্ধে এবং জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ২০ দল যুগপৎভাবে এবং শরিকরা যার যার মতো কর্মসূচি পালন করবে।
এর আগে বিকাল সোয়া ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, এনডিপির সভাপতি কারী আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপ সভাপতি শাওন সাদেকী, পিপলস লীগের মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব হোসেন, জাতীয় দলের সভাপতি এহসানুল হুদা, জাগপা মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, ইসলামী ঐক্য জোটের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শওকত আমিন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ। বৈঠক শেষে শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে ইফতার করেন। আন্দালিব রহমান পার্থের জোট ছেড়ে যাওয়া ও ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের আলটিমেটামের পর এ বৈঠক ডাকে বিএনপি। সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্তসহ বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে বুধবার ২০ দল ছাড়ার ঘোষণা দেন বিজেপি সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ। এর পরদিন বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আলটিমেটাম দেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এতে জোটটিতে চরম অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পার্থকে জোটে ফেরানোসহ ২০ দলকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এজন্য সোমবারের বৈঠকে পার্থকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে আন্দালিব রহমান পার্থ বৈঠকে যোগ দেননি।