আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৪-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজা

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
| প্রথম পাতা

মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্য মানুষের মনে তাকওয়া সৃষ্টি করা। আল্লাহর ভয়ে সংযমী মানুষই আদর্শবান, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, পরোপকারী ও যাবতীয় মানবিক গুণের অধিকারী হয়। তাকওয়ার জন্য প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি। দেহের অবস্থা খারাপ হলে আমরা স্বাস্থ্যের অবনতি মনে করি, চিকিৎসার তাড়া অনুভব করি। অথচ আত্মিক রোগের প্রতি উদাসীন। রমজানে আত্মশুদ্ধির সেই ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশ্ন জাগতে পারে, রোজা কি তাহলে কেবল মানুষের আত্মা নিয়েই চর্চা করে? দেহের কোনো উপকার সাধন করে না? স্বাস্থ্যগত কোনো সুফল কি রোজার মধ্যে নেই? কারণ, বাহ্যত আমরা দেখি, একটানা এক মাস দিনের বেলা না খাওয়া, পান না করার নাম রোজা আর শরীরকে কষ্ট দেওয়াই রমজানের সাধনা। পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, রমজানে সিয়াম সাধনার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাগত উপকারিতা আত্মিক উপকারিতার চেয়ে কম নয়, বেশি। আমরা যা কিছু পানাহার করি, পাকস্থলীতে গিয়ে গোটা শরীরে সাপ্লাই হয় এবং আবর্জনা ও বর্জ্যগুলো মলমূত্র, ঘাম হয়ে বেরিয়ে আসে। এর জন্য পাকস্থলীকে সারা বছর সারাক্ষণ অবিশ্রান্ত কাজ করতে হয়। রমজান যখন 

আসে একটানা এক মাস পাকস্থলী দিনের বেলা খাদ্য ও পানীয়ের ঘানি টানা থেকে সাময়িক অব্যাহতি পায়, যা তার স্বাস্থ্য ও বিশ্রামের জন্য একান্তই প্রয়োজন।
আমাদের ঘরবাড়ি, কলকারখানা কিছুদিন পরপর পরিচ্ছন্ন করতে হয়। যন্ত্রপাতি ওয়েলিং করার প্রয়োজন হয়। অনুরূপ, মাহে রমজানে দিনের বেলা উপোস থাকাতে পাকস্থলীর কারখানাটি বছরে একবার ঝাড়ু দেওয়ার কাজ হয়ে যায়। ময়লা, আবর্জনা, রোগ-শোক দূর হয়ে যায়। ‘মেদভূঁড়ি কি করি’ বর্তমানে একটি মুখরোচক জিজ্ঞাসা। বাংলাদেশের মতো গরিব দেশেও মেদভূঁড়ির চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠতে হয়েছে। এই মেদভূঁড়ি কমানোর মোক্ষম সুযোগ রমজানের রোজা।
আমাদের নিয়মিত খাদ্যের অশোধিত কণাগুলো চর্বি ও শর্করা আকারে রক্তে বা শরীরের জটিল গ্রন্থিতে জমে যায়। ডাক্তাররা বলেন, শরীরের অশোধিত চর্বি থেকেই ক্যান্সারের মতো বহু মারত্মক রোগের সৃষ্টি হয়। যার প্রতিষেধক হচ্ছে উপোস থাকা। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে উপোস থাকাকে চিকিৎসার একটি উন্নত পদ্ধতি রূপে গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষত, যাদের শরীর অযৌক্তিকভাবে মোটা হয়ে গেছে, তাদের একবেলা না খাওয়ার আর রাতেও নিয়ন্ত্রিত আহার করার ফরমায়েশ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে রমজানে এক মাস ফরজ রোজা এবং শাওয়ালে ছয়টি ও প্রতি মাসে তিনটি নফল রোজার বিধানটি দেখুন, ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে ডায়েট কন্ট্রোলের কত চমৎকার ও কার্যকর পন্থা।
এ কথাও পরিষ্কার, রোজাদার ব্যক্তিকে ইসলামের নির্দেশ মোতাবেক ইফতার ও সাহরির সময় খাওয়া-দাওয়ায় অপচয় ও বাড়াবাড়ি পরিহার করতে হবে। তাহলেই রোজার স্বাস্থ্যগত উপকার পুরোপুরি পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় ফল বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
দৈহিক অসুস্থতার চাইতে মনের অসুস্থতা জটিল। মন যদি ভালো থাকে অনেক রোগ এমনিতে সেরে যায়। এই ভালো মন পাওয়ার একমাত্র উৎস বিশ্বাস, ঈমান, সৎ চিন্তা, সৎ সঙ্গ ও সৎ কর্ম, রমজানে যার ব্যাপক চর্চা হয়। আল্লাহকে হাজের-নাজের জেনে রোজা রেখে রোজাদার বিশ্বাসে বলীয়ান হয়, সুন্দর মনের অধিকারী হয়। ফলে কোনো দুঃখ-দুর্দশায় সে বিচলিত হয় না। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিচর্যায় যার গুরুত্ব অপরিসীম।
শরীরের রোগব্যাধি দূর করার অন্যতম উপায় হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি। রমজানে হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়ামের কাজটি মনের অজান্তেই হয়ে যায়। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত জামাতের জন্য হেঁটে আসা-যাওয়া, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া, এমন কি তারাব্ িনামাজে দীর্ঘ দেড়-দুই ঘণ্টা দাঁড়ানো ও রুকু-সিজদাÑ এগুলোকে শরীর চর্চার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অবশ্যই অবকাশ আছে।
রোজা আল্লাহর হুকুম, ব্যায়াম বা স্বাস্থ্যসেবার জন্য নয়। আল্লাহর হুকুম হিসেবেই মুসলমানরা রোজা রাখে। এ হুকুম পালন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাগত সুফল একটি বাড়তি পাওনা।