নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো স্থান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর স্মরণে এক নাগরিক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, এদেশে স্বৈরাচার অনেকবার চেষ্টা করেছে গণতন্ত্রকে ধবংস করে চিরস্থায়ী হতে। কেউ কিন্তু পারেনি। আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট গ্যারান্টি দিতে পারি আমার অভিজ্ঞতার আলোকেÑ বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো জায়গা নেই। স্বৈরতন্ত্র যতই মনে করে টাকা দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রভাব খাটিয়ে তারা চিরস্থায়ী হতে পারবে তারা আহমকের স্বর্গে বাস করে।
তিনি বলেন, মাহফুজউল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন এ দেশে সবাইকে জাতীয় যে সত্তা, আমাদের কেউ কোনো সময়ে মুক্তির পথ থেকে অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করবে তারা ব্যর্থ হবে। আমরা মুক্তির পথে আছি, আমরাই জয়ী হবো। আসুন আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে থাকি এবং সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগাই। যাতে মাহফুজউল্লাহর স্বপ্ন দেরিতে হলেও আমরা বাস্তবায়িত করতে পারি।
ষাটের দশকে মাহফুজউল্লাহর সঙ্গে পরিচয়ের স্মৃতিচারণ করে ড. কামাল বলেন, আজকে সব মহলের লোক এখানে একত্রিত হয়েছেন। উনাকে (মাহফুজউল্লাহ) সম্মান জানাচ্ছেন কেন? উনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন, সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন, উচিত কথা বলার জন্য। যখন উচিত কথা বলা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আজকেও ঝুঁকিপূর্ণ আছে।
৬০-এর দশক, সেই স্বৈরাচারের দশকের চেয়েও ভয়াবহ ছিল। এখন আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি। কিন্তু সেই স্বৈরতন্ত্রের অনেকগুলো আলামত আমাদের চারদিকে লেগে থাকে। সেই কারণে বলি, নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। আজকে এখানকার উপস্থিতি দেখাচ্ছে যে, আমাদের মধ্যে সেই ঐক্যের পক্ষে সবার যে আকর্ষণ সেটা এখনও আছে। উচিত কথা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, মুক্তির কথাকে কেন্দ্র করে আমরা আসুন আবার ঐক্যবদ্ধ হই।
নাগরিক সভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, আইন নেই, মূল্যবোধ নেই। প্রতিদিন ধর্ষিত হচ্ছে, সব খবর পত্রিকায় আসে না। কোনো বিচার হচ্ছে না, দীর্ঘসূত্রতা। এ কি অরাজকতা। দেশে জনগণের প্রতি সরকারের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে, বাকরুদ্ধকর পরিবেশে আমরা কেউ বাঁচব না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি প্রতিবাদ করতে চাই, জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে যদি প্রতিবাদ করতে চাই, আসুন জনগনের ঐক্য গড়ে তুলি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র উদ্ধার ঐক্য ছাড়া হবে না, স্বৈরতন্ত্রের বিদায় ঐক্য ছাড়া হবে না, ফ্যাসিবাদের অবসান ঐক্য ছাড়া হবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অশ্রুসজল আবেগআপ্লুত কণ্ঠে বলেন, মাহফুজউল্লাহ আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। সে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে এটা কখনও ভাবিনি। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এত ঘনিষ্ঠ ছিল যে, আমি কখনও সে আমার পাশে থাকবে নাÑ এটা ভাবিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌসের পরিচালনায় নাগরিক সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য নুহ আলম লেলিন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা‘দাত হুসেন, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুহাম্মদ জমির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবির, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, প্রয়াত মাহফুজউল্লাহর মেয়ে নুসরাত হুমায়রা বক্তব্য রাখেন।
নাগরিক সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন মাহফুজউল্লাহর বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ। এ সময় বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, শামা ওবায়েদ, জহিরউদ্দিন স্বপন, তাবিথ আউয়াল, বিকল্পধারার শমসের মবিন চৌধুরী, সুশাসনের বদিউল আলম মজুমদার, সিনিয়র সাংবাদিক এমএ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, নবনীতা চৌধুরীসহ প্রয়াত সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।