- খুলনা ও চট্টগ্রাম দিয়ে কাজ শুরু
- অনুপ্রবেশকারী ও দুষ্কৃতকারীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স
-সবাইকে নিয়ে কাজ করতে সংসদ সদস্যদের প্রতি নির্দেশনা
- সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্য
এবার সংগঠন শক্তিশালী করার মিশনে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরের মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরো রমজান মাসজুড়েই চলবে এসব সভা। আগামী অক্টোবরে দলটির ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই সারা দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এসব সফর শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করতে চায় দলের হাই কমান্ড। এরই মধ্যে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এসব সভা থেকে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করাসহ তাদের নিয়ে কাজ করতে দলীয় সংসদ সদস্যদেরও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর ও বর্ধিত সভা কেন্দ্র করে জেলা ও মহানগর কমিটিগুলোও সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কমিটিগুলোকে অনুমোদন দিতে শুরু করেছে তারা। প্রায় ৪ বছর পর খুলনা মহানগরের অন্তর্গত সোনাডাঙ্গা, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ মে’র বর্ধিত সভা সামনে রেখে কিছুটা পরিবর্তন করে চলতি সপ্তাহে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে সদর থানা কমিটিকেও। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছেÑ সব সমস্যা সমাধান করে দলকে নতুন করে ঢেলে সাজানো; দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্ব, কলহ, গ্রুপিংয়ের মতো সমস্যা সমাধান করে তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে প্রস্তুত করা। আগামী অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনের আগেই সারা দেশে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের সম্মেলনের কাজ শেষ করে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে বছরব্যাপী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপন করার লক্ষ্য নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী অক্টোবরেই শেষ হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ। দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলন যথাসময়েই করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। অক্টোবরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা সম্মেলনের তাগিদ দিয়েছেন দলীয় প্রধান। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এখন সে লক্ষ্যে জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা করে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করছেন। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করার কেন্দ্রের নির্দেশ এসব বর্ধিত সভা থেকে দেওয়া হচ্ছে।
গেল শনিবার খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা চুয়াডাঙ্গায় সাংগঠনিক সফর এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজীর দেউরিতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা, দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিশেষ এ বর্ধিত সভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্দেশে সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে দলের তৃণমূল পর্যায়ে জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করতে হবে। দলীয় সংসদ সদস্যদের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে নির্দেশ দেন হানিফ। তিনি বলেন, যত দ্রুত নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলবেন, তত আপনাদের জন্য মঙ্গল। এলাকায় উন্নয়ন কর্মকা-ে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করুন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেসব সংসদ সদস্য দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীদের বিরোধিতা করেছেন, তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হবেন বলেও মন্তব্য করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়া গেল শুক্রবার সিলেট বিভাগীয় বর্ধিত সভা করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। পরে জেলা নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন হানিফসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলায় দ্রুত সম্মেলন করার তাগিদের পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীরা যেন পদ-পদবিতে আসতে না পারে, সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। সিলেটের ওই বৈঠক প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান বলেন, যেসব সাংগঠনিক ইউনিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে, ওইসব জায়গায় আগামী অক্টোবরের আগে দ্রুত সম্মেলন করতে তাগিদ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। অভ্যন্তরীণ ছোটোখাটো সমস্যা থাকলে সেগুলো সমাধানেরও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, স্থানীয়ভাবেও সতর্ক থাকতে হবে।
গেল রোববার থেকে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিশেষ বর্ধিত সভা করার কাজ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ওই দিন যশোর এবং নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা, সোমবার সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ, আগামী ১৮ মে (শনিবার) খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ, ১৯ মে রোববার খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ, ২০ মে সোমবার বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগ এবং ২১ মে মঙ্গলবার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণ করবে খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিম। এসব সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে ফেনীতেও বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি বিভাগগুলোয় বর্ধিত সভা ডেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
জানা গেছে, গেল ২৯ মার্চ গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে জাতীয় সম্মেলন সফল করতে আটটি পৃথক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সভা থেকে কমিটিগুলোয় কার কী ভূমিকা থাকবে, তা নির্ধারণের জন্য সম্পাদকম-লীর কয়েক সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পেয়েই নেতারা বিভাগীয় নেতাদের ঢাকায় ডেকে আনেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখিয়েছে খুলনা বিভাগ। নির্দেশনা আসার পরই গেল ২৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা বিভাগের জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে এর জেলাগুলোয় বর্ধিত সভা করার সিদ্ধান্ত নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গেল ৮ মে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, মূলত আমরা ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত কমিটিগুলো করার বিষয়ে জোর দিচ্ছি। সেভাবেই দিকনির্দেশনা দিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় বলা হচ্ছেÑ কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো ধরনের দুষ্কৃতিকারী বা অনুপ্রবেশকারীরা স্থান না পায়। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছেÑ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানগুলোয় সবাইকে নিয়ে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানগুলো যেন একেবারে তৃণমূলে গ্রামপর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়।