দেশের বন্দরনগরী ভৈরব বাজার রেলওয়ে জংশন স্টেশন। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত প্রায় শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ স্টেশনে যাত্রীদের চাহিদার তুলায় আসন নেই। ফলে স্ট্যান্ডিং টিকিটেই একমাত্র ভরসা যাত্রীদের। শুধু তাই নয়, প্ল্যাটফর্মে নেই পর্যাপ্ত বসার চেয়ার। এমনকি নেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন টয়লেট। এছাড়া দুটি প্ল্যাটফর্মের একটি দখল করে নিয়েছেন হকাররা। অথচ স্টেশনটি এগিয়ে রয়েছে সরকারের রাজস্ব আদায়ে।
জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকে নদীবন্দর ভৈরব বাজার ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। ফলে বাণিজ্যিক স্বার্থে তৎকালীন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি ১৯১২-১৯১৮ সালে প্রথমে ভৈরব-ময়মনসিংহ রেলপথ স্থাপন করে। পরে ১৯৩৭ সালে মেঘনা নদীর ওপর প্রথম রেলসেতু নির্মাণসহ ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করলে ভৈরবে জংশন স্টেশনের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়। ফলে রেলপথে বাড়তে থাকে যাত্রী সংখ্যা। বর্তমানে এ জংশন স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ এবং কিশোরগঞ্জ-ঢাকা পথে ২৪টি ট্র্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ১৯টি ট্রেনই যাত্রাবিরতি করে এ স্টেশনে। ফলে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর এবং বিমানবন্দরের পরই ভৈরব রেলস্টেশন থেকে মালামাল বুকিং ও টিকিট বিক্রির মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে। আশপাশের জেলা ও উপজেলার ছোট-বড় স্টেশনগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও বছরের পর বছর ধরে স্টেশনটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার ডাবল লাইন চালু করলেও বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। ট্রেনে ওঠানামার সময় যাত্রীদের কাছ থেকে কখনও মানিব্যাগ, কখনও দামি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। প্ল্যাটফর্মে সিসি ক্যামেরা থাকলেও চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারে কোনো কাজেই আসে না। রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের হাতে টিকিট চেকিংয়ের নামে যাত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তারা যাত্রীদের টিকিট না কাটতে অর্থাৎ বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্টেশনটিতে হাতেগোনা কয়েকটি পদ শূন্য থাকলেও অধিকাংশ বিভাগ ও পদে জনবল রয়েছে। এরপরও যাত্রীদের মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা। কর্মচারীদের বসবাসের জন্য সরকারি রেলওয়ে কলোনির অধিকাংশ বাসাবাড়ি বেদখল হয়ে থাকার অভিযোগ আছে। এসব বাসাবাড়ি ভাড়া দিয়ে মাস শেষে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দখলদাররা। টিকিট কাউন্টারে ভাংতি না থাকার অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও বিস্তর। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ মনে করেন, আশপাশের স্টেশনগুলোর সেবার মান বাড়লেও ভৈরবে বাড়েনি। সরকারি জিল্লুুর রহমান মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম সেকুল বলেন, রেলপথের যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে সরকার নতুন ট্রেন ও ইঞ্জিন সংযুক্ত করেছে। একই সঙ্গে ভৈরব থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ডাবল লাইন চালু করেছে। ফলে আশপাশের রেলস্টেশনগুলোর ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় ভৈরবের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিছুই হয়নি। তার মতে, পুরোনো এ স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ যাত্রীসেবার মান বাড়ালে সরকারের রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে। যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছেন বলে জানান ভৈরব রেলস্টেশন মাস্টার একেএম কামরুজ্জামান। এরপরও মাঝেমধ্যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে বলে স্বীকার করেন তিনি। রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে যাত্রী তুলনায় প্ল্যাটফর্মে আসন সংখ্যা সীমিত বলে স্বীকার করেন তিনি।