লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও দায়সারাভাবে কাজে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে ষ আলোকিত বাংলাদেশ
লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ সড়কের ১৯ কিলোমিটার সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২২ কোটি টাকার এ কাজ শেষ হতে না হতেই রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে দেবে যাওয়াসহ ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও জোড়াতালি দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ সড়কের ১৯ কিলোমিটার মেরামত বা সংস্কারের জন্য ২১ কোটি ৯২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। টেন্ডারে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহীদ ব্রাদার্স ও ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স জেবি। কাজটি মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে।
সিডিউল অনুযায়ী প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কে ৬ ইঞ্চি বেস্টেফ ওয়ান (৭০ শতাংশ পাথর ও ৩০ শতাংশ বালু), ২ ইঞ্চি বাইন্ডার, ওভারলে ৪০ মিলি ধরা রয়েছে। এছাড়াও সড়কের দুই পাশে ৩ ফুট করে মাটি ভরাটের কথা রয়েছে। সোমবার ওই সড়কের পালেরহাট ও বেড়ির পাশের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খনন যন্ত্র (ভেক্যু) দিয়ে পুরোনো সড়কটি উল্টিয়ে ব্ল্যাকটপ ভেঙে বালু ছিটিয়ে পানি দিয়ে রোলারিং করা হচ্ছে। কার্পেটিং করা স্থানে রোলারিংয়ে পাথরগুলো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। ৫০ মিলি বাইন্ডার থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ স্থানেই ২০ থেকে ৩০ মিলি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। ৬ ইঞ্চি বেস্টেফ ওয়ান থাকার কথা থাকলেও তা কোথাও দৃশ্যমান নয়। সড়কের দুই পাশে ৩ ফুটের স্থলে ১ ফুট করে মাটি ফেলা হচ্ছে, যা স্বীকার করলেন কর্মরত শ্রমিকরাও। মাটি ভরাট না করায় কয়েকটি স্থানে এজিংয়ের ইট সরে গেছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে কোথাও কোথাও দেবে গেছে রাস্তা। সংস্কারের পর সাড়ে ৯ ইঞ্জি পুরত্ব থাকার কথা থাকলেও অনিয়মেই সাড়ে ৪ ইঞ্চিতে আটকে যাচ্ছে। ৮ কিলোমিটার সড়কে বেস্টেফ ওয়ান (৭০ শতাংশ পাথর ও ৩০ শতাংশ বালু) দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বিটুমিন ও পাথর মেশানোতে তদারকি নেই বললেই চলে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পুরোনো সড়ক খনন যন্ত্র (ভেক্যু) দিয়ে উল্টিয়ে রোলার দিয়ে পিষে দিয়েছে। নতুন পাথর দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাতের অন্ধকারেও কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তাদের অভিযোগ, এক পাশে কাজ শেষ করে অন্য পাশে যাওয়া মাত্রই পিছন থেকে ভেঙে চৌচির হয়ে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু যেসব স্থানে গর্ত ছিল সেখানে নতুন পাথর দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাটের পাঁয়তারা চলছে। লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত তাদের ম্যানেজ করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কাজের শুরুতে কিছুটা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কঠোর তদারকিতে এখন কাজটি ভালোভাবে হচ্ছে। তবুও পরিপূর্ণ বিল দেওয়ার আগে পুরো সড়ক যাচাই করা হবে। কোথাও অনিয়ম দেখলে সেখানে ঠিকাদারকেই মেরামত করতে হবে।