আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন নিজে নিজেই

মানসিক প্রশান্তির জন্য নিয়মিত প্রার্থনা, মেডিটেশন কিংবা কোমল সুরের গান শোনা যেতে পারে

ডা. মহসীন কবির লিমন
| সুস্থ থাকুন

উন্নত হচ্ছে পৃথিবী, সেসঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত হচ্ছে জীবন ব্যবস্থা। আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় আমাদের চলাফেরা, খাওয়াদাওয়াসহ পরিবর্তিত হচ্ছে সবকিছুই। আর এর একটি প্রভাব আমাদের শরীরের ওপর পড়ছে। কিছু রোগ আমাদের জীবনসঙ্গী হিসেবে স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধে। আধুনিক মানুষের তেমনি একটি রোগ হলো হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপ। পুরো পৃথিবীতেই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও বিভিন্ন বয়সি মানুষের উচ্চরক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক জরিপে বেরিয়ে এসেছে, পুরো পৃথিবীতে প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ মারা যায়, এর প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষই উচ্চরক্তচাপের কারণে মারা যাচ্ছে। ইদানীং আবার তরুণ বয়সিদের হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে আধুনিক জীবন ব্যবস্থা ও দৈনন্দিন খাদ্য প্রক্রিয়াকেও দায়ী করা যায়। তাই সময় এসেছে এখনই সবাইকে হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার। সাধারণত কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই এ রোগের ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমাদের করণীয়Ñ
১. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন : প্রথমেই পরিমিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রত্যেকের বয়স, উচ্চতা, লিঙ্গ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট মেনে যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই খাবার খাওয়া উচিত। খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ফলমূল ও শাকসবজি রাখতে হবে। চর্বি-জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা ছাড়তে হবে। রান্নায় কম পরিমাণে লবণ দিতে হবে ও টোকা লবণ খাওয়া ছাড়তে হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কেউ যদি প্রয়োজনের তুলনায় ১০০ ক্যালরি খাবার প্রতিদিন বেশি খান তবে বছরে সাড়ে চার কেজি ওজন বৃদ্ধি পাবে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে : আধুনিক জীবনব্যবস্থায় আমাদের কায়িক পরিশ্রম অনেক কম হয়। আর তাই আমাদের দেহে উচ্চরক্তচাপসহ নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধছে। তাই মনে রাখতে হবে, ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন, যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁঁকি কমাবে এবং উচ্চরক্তচাপও কমাবে। শিশুদের প্রতিদিন এক ঘণ্টা শারীরিক কাজ ও খেলাধুলা করা প্রয়োজন। এছাড়াও পরিবারে হালকা ব্যায়াম করার রেওয়াজ চালু করতে হবে। সারা দিন বসে থাকার কাজ করেন যারা তাদের অবশ্যই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজগুলো করতে হবে। দিনে নির্দিষ্ট সময় রুটিনমাফিক ব্যায়াম করুন ও হাঁটুন।
৩. স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এজন্য সঠিক ও পরিমিত খাবার নির্বাচন করা জরুরি।
৪. সিগারেট, মদসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে-কোনো নেশাজাতীয় দ্রব্যই শরীরকে উত্তেজিত করে, রক্তচাপ বাড়ায়।
৫. সাধারণত কাজের চাপ বেশি থাকলে বা মানসিকভাবে উদ্বেগ, অবসাদগ্রস্ত বা ক্ষোভের মধ্যে থাকলে দেহে উচ্চরক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়। আর তাই যতটা সম্ভব টেনশনমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। যারা একসঙ্গে অনেক কাজ করেন তাদের ধীরে ধীরে একের পর এক কাজ শেষ করতে হবে। 
৬. মানসিক প্রশান্তির জন্য নিয়মিত প্রার্থনা, মেডিটেশন কিংবা কোমল সুরের গান শোনা যেতে পারে। এছাড়া সবসময় সৃষ্টিশীল 
চিন্তার মধ্যে থাকার অভ্যাস 
করতে হবে এবং যে কোনো পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকভাবে 
নেওয়ার মানসিক শক্তি বাড়াতে হবে।

ডা. মহসীন কবির লিমন 
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, লেখক ও গবেষক
ইনচার্জ, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন
বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ, ঢাকা