আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

গরিবের ঘর নির্মাণে অনিয়ম

অসাধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

| সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্প এরই মধ্যে অনেক ভিটাবাড়িহীন মানুষের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের মানবিক উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তবে পাশাপাশি এমন অভিযোগও রয়েছে, হতদরিদ্র পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার প্রকল্পে নয়ছয় হয়েছে। আলোকিত বাংলাদেশে এতদ্বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) বরাদ্দের খাদ্যশস্য ও টাকা দিয়ে গ্রামের হতদরিদ্রদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়া সরকারি মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঠিকাদার পরস্পর যোগসাজশে ঘর নির্মাণে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত ডিজাইন পরিবর্তন করে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে নিম্নমানের ঘর তৈরির বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। আরও প্রকাশ, খোদ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ঘর নির্মাণ কার্যক্রম সরেজমিন পরির্দশন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এখানে উল্লেখ্য, এদেশে ভিটাবাড়িহীন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। হতদরিদ্র মানুষ রয়েছেন কয়েক কোটি। বাস্তবিক কারণেই এদের সবাইকে বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়া সম্ভব নয়। এতদসত্ত্বেও সরকার সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের জন্য আশ্রয় নিশ্চিত করার যে মহৎ প্রকল্প নিয়েছে তা সাধুবাদযোগ্য। প্রকল্পের আওতায় অনেককে ঘরসহ জমিও দেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, গেল বছর জুলাই মাসের দিকে প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে ঘরের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ টাকা। নির্মাণ ব্যয় বাড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল ঘরগুলোর মান উন্নত করা, ঘরগুলো যাতে টেকসই হয়। অথচ কিছু অসাধু ব্যক্তির কর্মকা-ে সরকারের এ সদিচ্ছা কিছুক্ষেত্রে ক্ষুণœ হচ্ছে। নিম্নমানের উপাদান ব্যবহারের সঙ্গে আরও অভিযোগ, তালিকায় নাম থাকার পরও কেউ কেউ ঘর পাচ্ছেন না, আবার তালিকায় নাম না থাকার পরও টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়েছেন। আবার এমন কেউ কেউ ঘর পেয়েছেন, যারা দারিদ্র্যের কোটার মধ্যে পড়েন না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অজানা থাকার কথা নয়। তারপরও কেন এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলো, তা জানার আগ্রহ সবার।   
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ দারিদ্র্যবিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি। সামগ্রিকভাবে ঝুঁকিহ্রাসকল্পে রয়েছে গৃহহীন পরিবারের জন্য টেকসই গৃহ নির্মাণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা প্রদান এবং গ্রামীণ এলাকায় শহরের সুবিধা প্রদান। মুজিববর্ষে ৬৮ হাজার গ্রামে ৬৮ হাজার ঘর দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। মহৎ এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অসাধু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে প্রকল্পের সুবিধাভোগীদেরও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের প্রাপ্য যথাযথভাবে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বুঝে নিতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নজরদারি ও তদারকি আরও বাড়াতে হবে।