চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নকআউট পর্বের নিজেদের শেষ আটটি অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল মাত্র দুটি। এ পরিসংখ্যান নিয়ে নাপোলির মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। তার ওপর ম্যাচের প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়ে দলটি। তবে স্বস্তির খবর, অ্যাওয়ে গোলের দেখা পেয়েছে দলটি। আঁতয়ান গ্রিজমানের গোলে সমতায় ফেরে তারা। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ১-১ গোলে স্বস্তির ড্রয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সা। অন্যদিকে দুর্দান্ত বায়ার্নের সামনে দাঁড়াতেই পারল না স্বাগতিক চেলসি, প্রথমার্ধে উইলি কাবায়েরোর বীরত্বে বায়ার্নকে আটকে রাখতে পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে ৩ গোল খেয়ে একরকম ছিটকে গেছেন ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের শিষ্যরা।
সান পাওলোর প্রাণবন্ত সমর্থকদের সামনে খেলা কতখানি কঠিন, সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বার্সেলোনা। ইতালিতে এমনিতেই বার্সার সুখস্মৃতি দুঃখস্মৃতি হয়ে আছে। নাপোলির মাঠে কখনও খেলা হয়নি, সেটাও হলো। কিন্তু নেপলসের প্রথমার্ধটা একরকম নরকের মতো গেল বার্সার। ম্যাচের একেবারে শুরু থেকেই খেই হারিয়েছিল কিকে সেতিয়েনের দল। এ ম্যাচ দিয়ে কোচ হিসেবে গাত্তুসোর মতো সেতিয়েনেরও অভিষেক হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। সেতিয়েন বেশিরভাগ সময় ছিলেন গাত্তুসোর আড়ালেই। রক্ষণ আঁটসাঁট করে রেখে বার্সেলোনাকে ওয়াইড পজিশনে খেলতে বাধ্য করছিল নাপোলি। চোটে পড়া জর্দি আলবার জায়গায় নেমেছিলেন জুনিয়র ফিরপো, অন্যপ্রান্তে নেলসন সেমেদো। দুই ফুলব্যাকের কাছ থেকে যে সাহায্যটা দরকার ছিল, কিছুই পায়নি বার্সা, প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষ বক্সে মাত্র তিনটি সফল পাস দিতে পেরেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সার হিসেবে এত কম পাস শেষবার দেখেছিল রোমার মাঠে, ২০১৮ সালে। সেই কস্তাস মানোলাস এবারও ছিলেন রক্ষণে, গোল করে নায়ক না হতে পারলেও ম্যাক্সিমোভিচের সঙ্গে জুটি গড়ে কালিদু কৌলিবালির অনুপস্থিতি বুঝতেই দেননি নাপোলিকে।
দিশাহারা বার্সাকে ৩০ মিনিটে হতাশায় ডোবান ড্রিস মার্টেনস। পিতর জিলেনস্কি ফিরপোর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে পাস দেন বক্সের বাইরে কোণায় থাকা মার্টেনসকে, জোরালো শটে টপ কর্নারে বল জড়িয়ে সান পাওলোর উদযাপন বাড়িয়ে দেন তিনি। তাতে রেকর্ডও হয়েছে মার্টেনসের। দিয়েগো ম্যারাডোনাকে আগেই টপকে গিয়েছিলেন। এবার মারেক হামসেকের সমান ১২১ গোল করে নাপোলির সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিও।
ম্যারাডোনার মাঠে প্রথমবারের মতো খেলতে গিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। ম্যাচটা খুব ভালো যায়নি। প্রথমার্ধে একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি, অবশ্য ম্যাচ শেষে খুব বেশি আক্ষেপে পুড়বেন না হয়ত। সেটা গ্রিজমানের জন্যই। মার্টেনসকে ফাউল করে বুস্কেটস ৫৭ মিনিটে যখন হলুদ কার্ড দেখলেন, তখন নিশ্চিত হয়ে গেছে, ফিরতি লেগে খেলবেন না তিনি। মার্টেনস ওই চোট নিয়ে কিছুক্ষণ পর বদলি হতে বাধ্য হয়েছেন। আর বুস্কেটস দারুণ এক পাস দিয়ে ভাগ্য খুলে দিয়েছেন বার্সার, সেমেদোর পা ঘুরে আসা বল ধরে ফ্রেঞ্চ গ্রিজম্যানের শটে ১-১। ২০০৬ সালের পর থেকেই তো ইতালির কোনো মাঠে জেতাই হয়নি বার্সেলোনার। সে তুলনায় মন্দ কী!
সার্জ গেনাব্রি সবশেষ লন্ডন সফরে এক ম্যাচে করেছিলেন ৪ গোল, এবার করলেন দুটি। সঙ্গে রবার্ট লেভানডভস্কির ১ গোল যোগ করে এর্লিং ব্রুট হালান্ডকে ঠেলে আবারও সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটা নিজের করে নিয়েছেন। (সাত ম্যাচে ১১ গোল)। এরপর ৮৩ মিনিটে চেলসির দুঃস্বপ্নের রাতে লাল কার্ড দেখে হতাশা আরও বাড়িয়েছেন মার্কোস আলনসো। রাতটি মনে রাখার মতো, তাই কোনো কারণ খুঁজে পাওয়ার কথা নয় চেলসি সমর্থকদের। চলতি মৌসুমে এ নিয়ে ঘরের মাঠে আট ম্যাচ হারল চেলসি।