আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও বড় পরিসর বিএসইসি’

ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিটেকশন অব ফ্রড শীর্ষক সেমিনারে বিএসইসির চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক
| অর্থ-বাণিজ্য

কোম্পানির আর্থিক বিবরণীর তথ্যে যদি গলদ থাকে, তাহলে কোনোদিন এপিসিয়েন্ট (কার্যকর) মার্কেট গড়ে উঠবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন। তিনি বলেছেন, আমাদের এরিয়া অব কাভারেজ (পরিসর) বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও অনেক বড়। তারা শুধু ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন নিয়ে কাজ করে। তাদের সেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার লোকবল রয়েছে। অথচ আমাদের মাত্র ৮৪ জন কর্মকর্তা। আর পিয়ন ও দারোয়ান নিয়ে আমরা ১৬০ জন কাজ করি।
বুধবার বিএসইসির কনফারেন্স কক্ষে ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিটেকশন অব ফ্রড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। 
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা একদিকে শক্তিশালী, অন্যদিকে অসহায়। একটি রেগুলেটরে মাত্র ৮৪ জন কর্মকর্তা। আর পিয়ন ও দারোয়ান নিয়ে আমরা ১৬০ জন কাজ করি। আমাদের এরিয়া অব কাভারেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও অনেক বড়। তারা শুধু ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন নিয়ে কাজ করে। তাদের সেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার লোকবল রয়েছে। আমরা ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস, স্টক এক্সচেঞ্জ, এসেট ম্যানেজমেন্ট, ফার্ম ম্যানেজার এবং ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি থেকে শুরু করে আন-লিস্টেড কোম্পানির সবাইকে কাভার করতে হয়। অথচ আমাদের লোকবল মাত্র ৮৪ জন। অর্গনোগ্রাম হচ্ছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে। কিন্তু এখনও লোকবল নিয়োগ করার পর্যায়ে আমরা পৌঁছাইনি।
তিনি বলেন, কোম্পানির মধ্যে অডিট কমিটির প্রধান হবেন একজন স্বাধীন পরিচালক, সিএফও’র দায়িত্ব কী, এমডির দায়িত্ব কী, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কী, অডিটরের দায়িত্ব কীÑ এসব কিছু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরে ডিসক্লোজার ভিত্তিতে আইপিও দেওয়ার পরও সব দোষ পড়ে কমিশনের ওপর। সেকেন্ডারি মার্কেট পড়ে গেলেও কমিশনকে দোষারোপ করা হয়। অথচ আমাদের কোনো বিনিয়োগ নেই। আমরা কারসাজি হলে ধরি, ডিমান্ড-সাপ্লাই ঠিক রাখি এবং এখানে যদি কেউ রিউমার (গুজব) ছড়ায় তাদের আইনের আওতায় আনি। তারপর মার্কেট ওঠানামা করার জন্য আমাদের সব দোষ দেওয়া হয়। রেগুলেটের হিসেবে এখানে অসহাত্ববোধ আমাদের।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, যখন আমার আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আনি, যে বার্নিং ইস্যুটি সবার সামনে চলে আসে। এখানে অনেক জাটলারি হয়, সেগুলো যাতে তারা আইপিও আসার আগেই ধরতে পারে, তাতে করে রেগুলেটররা অর্থাৎ আমরা অনেক শক্তিশালী হবো, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাবে, শক্তিশালী হবে। আল্টিমেটলি এপিসিয়েন্ট একটা মার্কেট গড়ে তুলতে আমার অনেকটা সমর্থন হবে। কারণ ইনফরমেশনে যদি গলদ থাকে কোনোদিন এপিসিয়েন্ট মার্কেট গড়ে উঠবে না।
ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিসের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিকদের প্রাধান্য দিয়ে এ মিটিংয়ের (সভা) আয়োজন করেছি। আমি বারবার বলিÑ সমাজে, ক্যাপিটাল মার্কেটে (পুঁজিবাজার) এবং অর্থনীতিতে কী ঘটছে এগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্লিয়ার করার জন্যই এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা জানি, কম্পিউটার কিছুই নয়। অ্যানালিস্ট যে অ্যানালাইসিস করবে গার্বেজ ইন ও গার্বেজ আউট। ইনপুট যদি ভুল থাকে সেখানে যদি মিস লিডিং, ফেব্রিকেটেড এবং ওভার এস্টিমেটেড অথবা আন্ডার এস্টিমেটেড ইনফরমেশন থাকে, তা দ্বারা আপনি যে অ্যানালাইসিস করবেন, তার ফলে যদি সিদ্ধান্ত নেন তাহলে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ইকনোমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
তিনি আরও বলেন, কোম্পানি নিজে যদি মনে করে, আমার ব্যালেন্স সিট ঠিক আছে, আমার অন্যান্য স্টেটমেন্টগুলো ঠিক আছে, তাহলে সে দেখবে রিটার্ন এবং ইক্যুইটি কোনো অপারেশন্স থেকে বেশি আসছে। তাহলে সে অপারেশন্সকে সাপোর্ট দিতে গেলে আমার এক্সপানশন কোন দিকে নিতে হবে। এক্সপানশন কোথায় বেশি হচ্ছে অর্থাৎ কস্ট মিনিমাইজেশন এবং ইনকাম জেনারেশন মেক্সিমাইজেশন করার যথেষ্ট পরিকল্পনাটিও যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারবে কিনা। অন্যথায় কোম্পানি নিজে যেমন বঞ্চিত হবে, মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিনিয়োগকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কেটে স্থিতিশীলতা থাকবে না।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সিকিউরিটি মার্কেটিংয়ের (বিএএসএম) ডিজি মো. মাহবুবুল আলম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, বিএসইসির পরিচালক কামরুল আনাম খান, এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সিএমজেএফের প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম রুবেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।